নামাযের বিশেষত্ব


নামাযের বিশেষত্ব
নামায র্ফা‌সী শব্দ। এর আরবী হল 'সালাত'। নামায বা সালাত কায়েম করা প্রত্যেক বয়স্ক ও বুদ্ধিমান মুসলমানের জন্য ফরয বা অবশ্য-কর্তব্য। নামায এক প্রকারের নেয়ামত। এটা সর্বাপেক্ষা উত্তম দোয়া বা প্রার্থনা। মানুষের জন্যে এই প্রার্থনার বিধান দান করে আল্লাহ্‌তাআলা মানুষের প্রতি অশেষ অনুগ্রহ করেছেন।

নামাযের মাধ্যমে আমরা আমাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে পারি; পাপ হতে মুক্তি লাভ করতে পারি। নামায মানুষকে খারাপ কাজ, খারাপ কথা-বার্তা, লজ্জাহীনতা, অশ্লীলতা, বিদ্রোহ প্রভৃতি হতে রক্ষা করে। নামায বিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিক উন্নতির পাথেয়- মু'মিনদের মে'রাজ। নামায বেহেশ্‌তের চাবি। একে ধর্মের স্তম্ভ বলা হয়।


আল্লাহ্‌তাআলা কুরআন করীমে বলেছেন,

(উচ্চারণ : ইন্নাস্‌ সালাতা তান্‌হা 'আনিল্‌ ফাহ্‌শায়ে ওয়াল মুন্‌কার)

অর্থঃ "নিশ্চয় নামায (নামাযীকে) অশ্লীলতা এবং মন্দকাজ হতে মুক্ত করে" (সূরা আন্‌কাবূত : ৪৬)।

(ইন্নাস সালাতা-নিশ্চয় নামায, তানহা-মুক্ত করে, 'আনিল ফাহ্‌শায়ে-অশ্লীলতা হতে, ওয়াল মুন্‌কার- এবং মন্দকাজ)।


সুতরাং নামায পড়া সত্ত্বেও যদি কেউ সেই দোষ হতে মুক্ত না হয়, যেভাবে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে, তার নামায প্রকৃত নামায নয়। নামাযের সাহায্যে আমাদের আত্মা সবল ও সুস্থ থাকে। আমরা অন্যায়, অশ্লীলতা এবং অমূলক সন্দেহ হতে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। যে সকল কু-অভ্যাস কিছুতেই দূর করা সম্ভব হয় না তা নামাযের মাধ্যমে বিশেষতঃ তাহাজ্জুদ নামাযের মাধ্যমে দোয়ার মাধমে দূর করা সম্ভব। যে কেউ যে কোন কু-অভ্যাস পরিত্যাগ করার জন্যে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অতি অল্পকালের মাঝেই সে আশ্চর্য ফল পাবে।


নামায পড়া এবং নামায কায়েম করার মাঝে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। নামায পড়ার মাঝে পূর্ণ মনোনিবেশ থাকতে পারে, না-ও থাকতে পারে, কিন্তু নামায কায়েম করার মাঝে কতগুলো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে;

যেমন-

(ক) বিনা ব্যতিক্রমে যথা সময়ে নামায আদায় করা;

(খ) ফরয নামায বা-জামাত আদায় করা;

(গ) একাগ্রচিত্ততার সাথে ধীরস্থিরভাবে নামায আদায় করা;

(ঘ) নামাযে ব্যবহৃত দোয়া-কালামের অর্থ বুঝে নামায পড়া;

(ঙ) নামাযের মাঝে অন্তরের আবেগ-অনুভূতি নিজ ভাষাতেও ব্যক্ত করা এবং আল্লাহ্‌তা'আলার কৃপা ভিক্ষা করা;

(চ) নিজের উপর মৃত্যুসম অবস্থা আনয়ন করা এবং মনে করা যে, আল্লাহ্‌ সবকিছু দেখতে পাচ্ছেন এবং তিনি সামনেই উপস্থিত আছেন এবং

(ছ) আল্লাহ্‌র সাহায্য এবং করুণার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। কুরআন শরীফে প্রায় ৮২ বার নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ হতেও নামাযের গুরুত্ব উপলদ্ধি করা যায়।



আল্লাহ্‌তা'আলা বলেছেন :
(উচ্চারণঃ ওয়া'মুর আহ্‌লাকা বিস্‌সালাতে ওয়াসতাবির 'আলায়হা; লা নাস্‌আলুকা রিয্‌কান্‌; নাহ্‌নু নারযুক্বুকা; ওয়াল 'আকিবাতু লিত্তাক্‌ওয়া)

অর্থঃ- এবং তুমি তোমার পরিবারবর্গকে নামাযের তাগিদ করতে থাকো। আমরা তোমার নিকট কোন রিয্‌ক চাই না, বরং আমরাই তোমাকে রিয্‌ক দিচ্ছি। বস্তুত তাক্‌ওয়া অবলম্বনকারীদের জন্যই উত্তম পরিণাম (সূরা ত্বাহা : ১৩৩)।

(সালাত-নামায, ওয়ামুর-এবং তুমি তাগিদ করো, আহ্‌লাকা-তোমার পরিবারবর্গ, ওয়াস্‌তাবির 'আলায়হা-এবং তুমি নিজেও এতে ধৈর্য্যসহ কায়েম থাকো, লা-না, নাসআলুকা-আমরা তোমার নিকট চাই, রিয্‌কান-কোন রিয্‌ক [জীবিকা], নাহনু-আমরা, নারযুক্বুকা-তোমাকে রিয্‌ক দিচ্ছি, ওয়াল আকিবাতু-এবং উত্তম পরিণাম, লিত্তাক্‌ওয়া- তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্যে)


অনেকে মূর্খতাবশতঃ নামাযকে একটা ট্যাক্স বলে মনে করে। আল্লাহ্‌তা'আলা উপরোক্ত আয়াতে এরূপ ধারণার খন্ডন করেছেন। বস্তুত আমরা নশ্বর দেহের জন্য যেমন নানাবিধ যত্ন নেই, সেরূপ আত্মার জন্যেও যত্নের আবশ্যক। বরং আত্মা যেহেতু চিরস্থায়ী, সেজন্য দৈহিক যত্নের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে আত্মার খাদ্য তথা নামযের মাধ্যমে আমরা আত্মাকে সতেজ এবং অটুট রাখতে পারি। মোটকথা, নামায মানুষের উপর কোন প্রকার ট্যাক্স নয়, বরং এ আত্মার জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নামাযের মর্মার্থ না বুঝে অনেকে লোক দেখানোর জন্য নামায পড়ে থাকে।


এরূপ নামাযী সম্বন্ধে আল্লাহ্‌তা'আলা বলেছেন :

(উচ্চারণঃ ফাওয়ায়্‌লুল্লিল্‌ মুসাল্লিনাল্লাযীনা হুম আন্‌ সালাতিহিম্‌ সা-হূন)

অর্থঃ সুতরাং দুর্ভোগ সে সব নামাযীদের জন্যে যারা তাদের নামায সম্বন্ধে উদাসীন (সূরা মাউন : ৫-৬)

(ফাওয়ায়্‌লুন-সুতরাং দুর্ভোগ, লিলমুসাল্লিন-সেসব নামাযীদের জন্যে, আল্লাযীনা-যারা, হুম- তাদের, সা-হূন-উদাসীন)


আঁ হযরত (সঃ) বর্ণনা করেছেনঃ "নামায মুমিনের মিরাজ স্বরূপ"। দৈনিক পাঁচবার নামাযের মাধ্যমে মু'মিন আল্লাহ্‌র সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে পারে। এছাড়া সে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাযের মাধ্যমে রাত্রির নিস্তব্ধতার মাঝে আল্লাহ্‌র অতি নিকটে আসতে পারে এবং বিশেষ সাক্ষাৎ লাভ করতে পারে। তখন মু'মিন তার মর্মজ্বালা আল্লাহ্‌র দরবারে নিঃশেষ করে দেয় এবং আল্লাহ্‌র য্‌করের (স্মরণের) মাধ্যমে এক অনাবিল শান্তি লাভ করে। ফলে তার বিপদ-বিক্ষুদ্ধ অশান্ত হৃদয়ে শান্তি ফিরে আসে।

সেজন্যে আল্লাহ্‌তা'আলা বলেছেন :

(উচ্চারণঃ আলা বি যিক্‌রিল্লাহি তাত্‌মায়িন্নুল্‌ কুলূব)

অর্থঃ স্মরণ রেখো! আল্লাহ্‌র স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে (সূরা রা'দ : ২৯)।

(আলা-স্মরণ রেখো! বিযিক্‌রিল্লাহে- আল্লাহ্‌র স্মরণেই, তাত্‌মায়িন্নু-প্রশান্তি লাভ করে, আল্‌ কুলূব-হৃদয়)

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অধিক পরিমাণে রাত্রি জাগরণ করে নামায পড়তেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে :

(ইন্না রব্বাকা ইয়া'লামু আন্নাকা তাকূমু আদ্‌না মিন সুলুসায়িল্লাইলে ওয়া নিস্‌ফাহূ সুলুসাহূ ওয়া তায়িফাতুম্‌ মিনাল্লাযীনা মা'আকা)

অর্থঃ নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক জানেন, তুমি দাঁড়িয়ে থাকো রাত্রের দুই-তৃতীয়াংশের কিছু কম এবং কখনো অর্ধেকাংশ এবং কখনো বা এক তৃতীয়াংশ এবং (দাঁড়িয়ে থাকে) তাদের এক দলও যারা তোমার সাথে রয়েছে। (আল্‌ মুয্‌যাম্মিল : ২১)

(ইন্না-নিশ্চয়, রাব্বাকা-তোমার প্রতিপালক, ইয়া'লামু-জানেন 'আন্নাকা তাকূমু, তুমি দাঁড়িয়ে থাকো, আদ্‌না মিন সুলুসায়িল্লাইলি-রাত্রের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কম, ওয়া নিস্‌ফাহূ-এবং অর্ধেকাংশ, ওয়া সুলুসাহূ-এবং এর এক তৃতীয়াংশ, ওয়া তায়িফাতুম্‌-এবং এক দল, মিনাল্লাযীনা-তাদের যারা, মা'আকা-তোমার সাথে রয়েছে।)

ফরয নামায বা-জামাত পড়তে হবে। কারণ তাতে শুধু ব্যক্তিগত কল্যাণই নয়, সামগ্রিক কল্যাণ লাভ করা যায়। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, 'জামাতে নামায আদায় করলে সাতাশ গুণ সওয়াব হয়।' এতদ্‌দ্বারা আমরা জামাতে নামাযের গুরুত্ব বুঝতে পারি। মানুষ সামাজিক জীব, তাই সমাজের সামগ্রিক কল্যাণের মাঝেই শান্তি নিহিত। ফরয ছাড়া অন্যান্য নামায ব্যক্তিগতভাবে একা পড়তে হয়। ঈদের নামায বা-জামাতে পড়তে হয়। এরূপে নামায আমাদেরকে আল্লাহ্‌র সমীপে ব্যক্তিগতভাবে এবং সম্মিলিতভাবে উপস্থিত করে। বছরে দু'বার ঈদের নামায, প্রতি সপ্তাহে একবার জুমু'আর নামায, প্রত্যহ পাঁচবার ফরয নামায, গভীর রাত্রে তাহাজ্জুদের নামায- এ সকল উপাসনার মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ এবং জাতি নৈতিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে সংশোধিত হতে পারে এবং সত্যিকার অর্থে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।


নামাযের মাধ্যমে ইতায়াত বা আজ্ঞানুবর্তিতার শিক্ষা লাভ করা যায়। তাছাড়া নেতার অধীনে চলা, সময়ানুবর্তিতা, সামাজিক সাম্য, একতা ও ভ্রাতৃত্ব, দৈহিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতা, একাগ্রচিত্ততা, পাপবর্জন এবং পুণ্যার্জন, আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য লাভ এবং নিদর্শন লাভ করা, সামাজিক কদাচার পরিহার, শান্তি ও সুস্থির মনোভাব, কষ্ট-সহিষ্ণুতা এবং সময়ের সদ্ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়ে নামাযে বহু শিক্ষা রয়েছে। (এ প্রসঙ্গে মৌলভী মোহাম্মদ সাহেব প্রণীত "নামায তত্ত্ব" পুস্তক দ্রষ্টব্য)।


হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ) বলেছেনঃ "নামায কী? এ এক প্রকার দোয়া যা তসবীহ (খোদাতা'আলার মহিমা কীর্তন), তাহমীদ(প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন), তাক্‌দীস (পবিত্রতা কীর্তন), এবং ইস্তিগ্‌ফার (নিজের দুর্বলতাসমূহ স্বীকার করে শক্তি প্রার্থনা) ও দুরূদ [হযরত রসূলে করীম (সাঃ)-এর প্রতি আশীষ ও বরকত কামনা] সমন্বিত বিনীত প্রার্থনা। সুতরাং যখন তোমরা নামায পড়ো তখন অজ্ঞ লোকদের ন্যায় দোয়ায় শুধুমাত্র আরবী শব্দ ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ থেকো না। কেননা, তাদের (অজ্ঞদের) নামায এবং ইস্তিগ্‌ফার সবই বাহ্যিক ক্রিয়াকলাপ মাত্র। তাতে কোন সারবস্তু নেই। তোমরা নামায পড়ার সময়ে খোদাতাআলার কালাম কুরআন এবং রসূলে করীম (সাঃ)-এর কালামে প্রচলিত দোয়া ছাড়াও নিজের যাবতীয় দোয়া নিজ ভাষাতেই কাতর নিবেদন জানাও, যেন তোমাদের হৃদয়ে সেই কাতর নিবেদনের সুপ্রভাব পতিত হয়"। হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ) পাঁচ ওয়াক্ত নামায সম্পর্কে বলেছেন- "পাঁচ ওয়াক্ত নামায কি? এ তোমাদের বিভিন্ন অবস্থার প্রতিচ্ছবিস্বরূপ। বিপদকালে তোমাদের জীবনের স্বাভাবিক গতিতে পাঁচটি পরিবর্তন সংঘটিত হয় এবং তোমাদের প্রকৃতির পক্ষে তদ্রূপ পরিবর্তন আবশ্যক।


(ক) সর্বপ্রথম পরিবর্তন তখন হয়, যখন তোমাদেরকে কোন আসন্ন বিপদ সম্বন্ধে অবহিত করা হয়। মনে করো, তোমাদের নামে আদালত হতে এক ওয়ারেন্ট জারী করা হ'ল। তোমাদের শান্তি ও সুখে ব্যাঘাত ঘটাবার এটাই প্রথম অবস্থা। বস্তুত এ অবস্থা অবনতির অবস্থার সাথে তুলনীয়; কেননা এ হতে তোমাদের সুখের অবস্থার পতন আরম্ভ হয়। এ অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তোমাদের জন্য যুহরের নামায নির্ধারিত হয়েছে। এর ওয়াক্ত সূর্যের নিম্নগতি হতে আরম্ভ হয়।


(খ) দ্বিতীয় পরিবর্তন তোমাদের উপর তখন আসে, যখন তোমরা বিপদের অতি সন্নিকট হও। মনে করো, তখন তোমরা ওয়ারেন্ট দ্বারা গ্রেফতার হয়ে বিচারকের সামনে উপস্থিত হয়েছো। এ অবস্থায় ভয়ে তোমাদের রক্ত শুকিয়ে যেতে থাকে, এবং শান্তির আলো তোমাদের নিকট হতে অপসারিত হওয়ার উপক্রম হয়। সুতরাং তোমাদের এ অবস্থা সেই সময়ের ন্যায় যখন সূর্যের আলো ক্ষীণ হয়ে আসে, সে আলোর প্রতি দৃষ্টিপাতও করা যায় এবং স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয় যে, এখন সূর্য অস্তমিত হবার সময় সন্নিকটে। এরূপ আধ্যাত্মিকতার প্রতি লক্ষ্য রেখে আসরের নামায নির্ধারিত হয়েছে।


(গ) তৃতীয় পরিবর্তন তোমাদের উপর তখন আসে যখন এ জাতীয় বিপদ হতে মুক্তি লাভের আশা সম্পূর্ণরূপে দূর হয় অর্থাৎ তখন যেন তোমাদের নামে চার্জশীট লেখা হয় এবং তোমাদের ধ্বংস সাধনের জন্য বিরুদ্ধবাদীদের সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থিত করা হয়। এ অবস্থায় তোমাদের স্বাভাবিক জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পায় এবং তোমরা নিজেদের কয়েদী জ্ঞান করতে থাকো। সুতরাং এ অবস্থা সেই সময়ের সদৃশ্য যখন সূর্য অস্তমিত হয় এবং দিবালোকের সকল আশার অবসান হয়। এরূপ আধ্যাত্মিক অবস্থার সাথে সংযোগ রেখে মাগরিবের নামায নির্ধারিত করা হয়েছে।


(ঘ) চতুর্থ পরিবর্তন তোমাদের উপর তখন আসে, যখন বিপদ তোমাদের উপর বস্তুতই পতিত হয় এবং এর ঘন অন্ধকার তোমাদেরকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। অর্থাৎ চার্জশীট প্রস্তুত ও সাক্ষ্য গ্রহণের পর শাস্তির আদেশ তোমাদেরকে শোনানো হয় এবং কারাদন্ডের জন্যে কোন পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়। সুতরাং এ অবস্থা সে সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে যখন রাত্র আরম্ভ হয় এবং গভীর অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। এরূপ আত্মিক অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে ইশার নামায নির্ধারিত হয়েছে।



(ঙ) এরপর যখন তোমরা এক দীর্ঘকাল এ বিপদের অন্ধকারে অতিবাহিত করো, তখন পুনরায় তোমাদের প্রতি খোদাতা'আলার করুণা উদ্বেলিত হয়ে ওঠে এবং তেমাদেরকে অন্ধকার হতে মুক্তি দান করে। যেমন অন্ধকারের পর পুনরায় প্রভাত দেখা যায় এরপর সেই আলো দিনের উজ্জ্বলতা নিয়ে প্রকাশিত হয়। এরূপ রূহানী অবস্থার মোকাবেলায় ফজরের নামায নির্ধারিত হয়েছে।


খোদাতা'আলা তোমাদের প্রকৃতিগত পরিবর্তনের পাঁচটি অবস্থা লক্ষ্য করেই তোমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্ধারণ করেছেন। এ হতে তোমরা উপলব্ধি করতে পারো যে, এ সকল নামায শুধু তোমাদের আত্মিক মঙ্গলের জন্যেই নির্ধারণ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা যদি এসব বিপদ হতে মুক্তি পেতে চাও তবে, এ পাঁচ ওয়াক্তের নামায পরিত্যাগ করো না। এগুলো তোমাদের অভ্যন্তরীণ ও আত্মিক পরিবর্তনের প্রতিবিম্বস্বরূপ। নামাযে আসন্ন বিপদের প্রতিকার রয়েছে। তোমরা অবগত নও যে, উদীয়মান নব দিবস তোমাদের জন্যে কী নিয়তি (কাযা ও কদর) নিয়ে উপস্থিত হবে। সুতরাং দিনের শুরুতেই তোমরা তোমাদের মাওলা (প্রকৃত অভিভাবক)-এর নিকট সবিনয় নিবেদন করো, যেন তোমাদের জন্য মঙ্গলময় এবং আশীষপূর্ণ দিনের আগমন হয়" (কিশতিয়ে নূহ্‌)।


হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ) আরও বলেছেন, "স্মরণ রেখো, নামায এমন এক জিনিস যে, এর দ্বারা দুনিয়াও সাজানো যায় এবং ধর্মও সাজানো যায়। কিন্তু বেশির ভাগ লোক যে নামায পড়ে, সেই নামায তাদেরকে অভিশাপ দেয়। যেমন, আল্লাহ্‌তা'আলা বলেছেন,

(ফাওয়ায়্‌লুল্লিল্‌ মুসাল্লীনাল্লাযীনা হুম 'আন সলাতিহিম সা-হূন)

অর্থঃ দুর্ভোগ সেসব নামাযীদের জন্যে যারা তাদের নামায সম্বন্ধে উদাসীন (সূরা মাউন : ৫-৬)। নামায এমন এক জিনিস যে, এ পড়লে সর্ব প্রকার মন্দ কাজ এবং নির্লজ্জতা হতে রক্ষা পাওয়া যায়।"

No comments

Powered by Blogger.