কলেমার বিশেষত্ব
কলেমার বিশেষত্ব
১. ইসলামী পরিভাষায় কলেমা বলতে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্" বাক্যকে বুঝায়। ইসলাম যে পাঁচটি রোকন বা স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত তন্মধ্যে কলেমা প্রথম।
২. কলেমা উচ্চারণে বা বাক্শক্তির বৈশিষ্ট্য দ্বারা মানবজাতি অপরাপর প্রাণী হতে উন্নততর হতে পেরেছে। আল্লাহ্তা'আলা বলেছেন, "নিশ্চয় মানব জাতির উপর দিয়ে এমন এক যুগ গিয়েছে যখন সে কোন উল্লেখযোগ্য বস্তুই ছিল না'' (সূরা আদ্ দাহ্র, ১ম রুকূ)। এরপর খোদা মানুষকে কথা বলতে শিক্ষা দেন। "রাহমান খোদা কুরআন শিখিয়েছেন, তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাকে কথা বলতে শিখিয়েছেন" (সূরা র্আ রহ্মানঃ আয়াত ৩-৫)। কথা মহাশক্তির উৎস এবং সকল কথার মাঝে আল্লাহ্তা'আলার কথাই সর্বোত্তম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ্তা'আলা বলেনঃ "যারা কাফির বা অস্বীকারকারী তাদের বাক্যকে সর্বনিকৃষ্ট করেছি এবং আল্লাহ্তা'আলার বাক্য সর্বোচ্চ" (সূরা তওবা : ৪০)। আল্লাহ্তা'আলা 'কুন্' অর্থাৎ 'হও' আদেশ দ্বারা বিশ্ব-চরাচর এবং এর মাঝের সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। অন্যান্য ধর্মপুস্তকেও এর সমর্থন আছে।
৩. কোন স্থায়ী কাজ করতে হলে পূর্ব হতে একটি পরিকল্পনা এবং নক্শার প্রয়োজন। অনুরূপভাবে, কলেমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু" (আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই) অংশে মানব জীবনের জন্য তৌহীদের (একত্ববাদের) মূল ও পূর্ণ পরিকল্পনা দেয়া হয়েছে। কলেমার "মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্" [মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্র রাসূল] অংশে তৌহীদের শিক্ষার একটি নক্শা বা জীবন্ত আদর্শরূপে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কথা বলা হয়েছে। যেহেতু এ মহানবীর শরীয়ত কুরআন পাকের পর আর কোন শরীয়ত বা ধর্মবিধান আসবে না এবং আল্লাহ্ এবং এ রাসূলের অনুগমনের (ইতায়াতের) মাধ্যমেই আধ্যাত্মিক উন্নতির এবং এনআম বা পুরস্কার প্রাপ্তির সকল পথ উন্মুক্ত রয়েছে, সে জন্য একমাত্র এ কামেল ও পরিপূর্ণ নবীর নামই কলেমার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। বস্তুত ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মে কোন নবীর নামযুক্ত কোন কলেমা নেই। একমাত্র ইসলাম ধর্মেরই কলেমা আছে। ইসলামের এ একটি অনন্য ও অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য।
৪. "লা ইলাহা" কথার অর্থ "নেই কোন উপাস্য"। ইলাহ্ শব্দের অর্থ ভয়, ভক্তি এবং ভালবাসার পাত্র। সুতরাং "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু" অংশের অর্থ হ'ল আল্লাহ্তা'আলার ভয়, ভক্তি এবং ভালোবাসার মোকাবেলায় যে পাত্রই পথ রোধ করুক না কেন তাকে আল্লাহ্র সামনে কুরবানী করতে হবে। তাহলেই আল্লাহ্কে পাওয়া যাবে। এ ভালোবাসার নমুনাস্বরূপ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে উপস্থাপিত করা হয়েছে কলেমার দ্বিতীয়াংশে। সেজন্য, কুরআন করীমে হযরত রসূলে করীম (সাঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ "নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহ্র রসূল [হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)]-এর মাঝে উৎকৃষ্টতম আদর্শ রয়েছে" (সূরা আহ্যাব : ২২)। আরো বলা হয়েছেঃ "বলো, যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভালোবাসো, তাহলে আমার [হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর] অনুসরণ করো, (তাহলে) আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল অপরাধ ক্ষমা করবেন" (সূরা আলে ইমরান : ৩২)
৫. "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু" কলেমাকে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) উৎকৃষ্ট যিক্র বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু, শুধু মৌখিকভাবে এ কলেমা পাঠ করার যথার্থ কোন মূল্য নেই। এ কলেমার মাধ্যমে আল্লাহ্র তৌহীদের শিক্ষা এবং আঁ হযরত (সাঃ)-এর আদর্শ অনুসরণ করার যে ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি আমরা করি তা কাজে পরিণত করার মাঝেই এর সার্থকতা নিহিত।
৬. কলেমা পাঠের মাধ্যমে আমরা মুসলমানরা যে শিক্ষা ও আদর্শের মন্ত্রে দীক্ষিত হই, তা একটি পবিত্র প্রতিশ্রুতি। বাস্তব জীবনে একমাত্র আল্লাহ্র উপর অবিচল আস্থা রেখে এবং পবিত্র রসূল মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আদর্শকে পূর্ণরূপে অনুশীলন করে আমরা এ পবিত্র কলেমার প্রতি সম্মান দেখাতে পারি এবং আমাদের প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারি। এটাই ইসলামের কলেমার সারমর্ম।
[প্রতিশ্রুত মাহদী ও মসীহ (আঃ) বলেছেনঃ "---------পরিত্রাণের ঘরে দাখিল হওয়ার দরজা হচ্ছে-
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্" (হুজ্জাতুল ইসলাম)
["মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) দুনিয়ার সামনে যে কলেমা পেশ করেছিলেন, সেই কলেমা
লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্" -ই আহমদীয়ত (খাঁটি ইসলাম)-এর কলেমা"।]
[-হযরত মুসলেহ মাওউদ (রাঃ)]
No comments