কা'বা শরীফ ও হজ্জের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কা'বা শরীফ ও হজ্জের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কোন কোন রেওয়ায়েত অনুযায়ী কা'বা শরীফের প্রথম বা মূল প্রতিষ্ঠাতা হলেন হযরত আদম (আঃ) (তফসীর ইবনে কাসীর)। পবিত্র কুরআনের মতে এটাই পৃথিবীর সর্বপ্রথম ইবাদত গৃহ। "ইন্না আওয়ালা বাইতিও উযিয়া লিন্নাসি লাল্লাযী বিবাক্কাতা মুবারাকাঁউ ওয়া হুদালিস্নল 'আলামীন' অর্থাৎ- নিশ্চয় সর্বপ্রথম মানব জাতির জন্য যে ঘর প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল তা হ'ল বাক্কাতে তা আশিষপূর্ণ ও হেদায়েতের কারণ সমগ্র বিশ্বের জন্য। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৯৭)। যবুর কিতাবেও এর উলেস্নখ দেখতে পাওয়া যায় (চংধষস ৮৪: ৪,৬)। উলেস্নখ্য, বাক্কা সেই উপত্যকার প্রাচীন নাম যেখানে বর্তমান মক্কা নগরী অবস্থিত। আজ হ'তে চার হাজার বছর পূর্বে খোদা-প্রেমিক ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ্তাআলার নির্দেশে আপন প্রিয়তমা স্ত্রী হযরত হাজেরা (রাঃ) এবং প্রাণাধিক পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে বর্তমান মক্কা শহর যেখানে অবস্থিত সেখানে রেখে যান। সে যুগে উক্ত স্থান সম্পূর্ণ জনমানবহীন ছিল। জীবন ধারনের কোন উপকরণ সেখানে ছিল না। সামান্য কিছু খাদ্য এবং পানীয়ের ব্যবস্থা করতঃ আল্লাহ্র ওপর ভরসা করে স্ত্রী-পুত্রকে রেখে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নিজ এলাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। এদিকে কয়েক দিনে যখন খাদ্য ও পানীয় নিঃশেষ হয়ে গেল তখন ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর পুত্র ইসমাঈলকে নির্ঘাত মৃত্যুর হাত হ'তে রক্ষা করার জন্যে অসহায় জননী হাজেরা পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে ইতস্ততঃ ছুটোছুটি করতে থাকেন। সকল চেষ্টা যখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো, তখন আল্লাহ্তাআলা মরুভূমির তলদেশ হতে এক সুস্বাদু পানীয় জলের ফোয়ারা নির্গত করেন। প্রাচীন গ্রন্থেও এর বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায় (আদি,২১:১৯) এ ফোয়ারা পরবর্তীকালে 'যমযম কূপ' নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। পরবর্তীকালে এ কূপকে কেন্দ্র করে লোক বসতি গড়ে ওঠে এবং পবিত্র মক্কা নগরীর ভিত্তি স্থাপিত হয়। আল্লাহ্র নির্দেশে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পুনরায় স্ত্রী-পুত্রের সাথে মিলিত হওয়ার জন্যে মক্কায় আগমন করেন। আল্লাহ্ তাঁকে স্বপ্নযোগে একমাত্র প্রিয় পুত্রকে কুরবানী করার নির্দেশ প্রদান করেন। তৎকালীন যুগে সমাজে নরবলীর প্রচলন থাকায় হযরত ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী পুত্র ইসমাঈলকে জবাই করতে উদ্যত হন, কিন্তু আল্লাহ্তাআলা প্রত্যাদেশ বাণী দিয়ে ইসমাঈলের পরিবর্তে পশু কুরবানী করার আদেশ দিয়ে ইসমাঈলকে আল্লাহ্র বাণী প্রচারের জন্যে উৎসর্গ করার হুকুম প্রদান করেন। তখন হ'তে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ)-এর পুণ্য- স্মৃতির স্মরণে প্রতি বছর পশু কুরবানীর প্রচলন হয়েছে। আদম (আঃ) কর্তৃক নির্মিত ইবাদত গৃহটি তখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। তাই আল্লাহ্ সেই গৃহকে পুনঃ নির্মাণের জন্যে ইব্রাহীম (আঃ)-কে নির্দেশ প্রদান করেন। ইব্রাহীম (আঃ)-এর পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর সহযোগে কা'বা গৃহকে নতুন করে গড়ে তোলেন। নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে আল্লাহ্তাআলা হজ্জের ঘোষণা করার আদেশ প্রদান করেন। "ওয়া আয্যিন ফিন্নাসি বিল হাজ্জ।" (সূরা হজ্জ, রুকু-৪)
ছাদ বিহীন কা'বা গৃহটি ৯ হাত উঁচু, ২৩ হাত দীর্ঘ এবং ২২ হাত প্রস্থ বিশিষ্ট ছিল। পরবর্তীকালে কা'বা গৃহের আরো বহুবার সংস্কার করা হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নবুওয়ত লাভের পূর্বে কোরেশরা যখন কা'বাগৃহের মেরামত করে তখন পাথরের অভাবে মূল গৃহটিকে বাধ্য হয়ে কিছুটা ছোট করতে হয়। সেই পরিত্যক্ত অংশের নাম 'হাতিম'। তোয়াফের হিসাব রক্ষার সুবিধার্থে গৃহের এক কোণে কাল রঙের একটি পাথর স্থাপন করা হয়। এ পাথরই 'হজরে আস্ওয়াদ' নামে পরিচিত। বাইবেলেও এ পাথরের উলেস্নখ দেখতে পাওয়া যায়, যথা- "তা পরীক্ষাসিদ্ধ প্রস্তর, বহুমূল্যবান কোণের প্রস্তর, অতি দৃঢ়রূপে বসানো" (যিশাইয়-১৮:১৬)।
পবিত্র কা'বা হজ্জ এবং হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর ঘটনা কুরআনের সূরা মায়েদা ১৩ রুকূ, বাকারা ১৫, ২৪ ও ২৫ রুকূ, হজ্জ ৪ রুকূ, সাফ্ফাত ৪ রুকূ, ইব্রাহীম ৬ রুকূ, আনকাবূত ৭ রুকূতে বর্ণিত হয়েছে। তৎসঙ্গে বাইবেলের আদি পুস্তকের ২, ১২, ১৬, ১৭, ১৮ অধ্যায় এবং যিশাইয় ৪৫:১৩, ১৪ পদ দ্রষ্টব্য।
No comments