বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন উচিত

 শিক্ষা বলতে বুঝায় মাটির মানুষকে মাটির মত করে চলতে শিখানো কিন্তু তা না হয়ে মানুষ হয়ে যায় অহংকারী, অর্থলোভী, হিংসাকাতর প্রানী। 
শিক্ষা বলতে বুজায় সৃষ্টিকর্তার রহস্য খুজা, সৃষ্টিকর্তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা অথচ মানুষ তা ভুলে গিয়ে নিজেই নিজেকে বানিয়ে ফেলছে পশুর ন্যায়।
তাই ডক্টর মুহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেছেন যার ভিতরে ধর্মীয় জ্ঞান নেই সে গন্ড মূর্খ। বর্তমান বাস্তবতা তাই দাড়িয়েছে, তাই আমরা বলছি শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন দরকার।

আমরা এমন একটা জাতী স্বাধীনতার ৪৭বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন নিয়ে কথা বলতে হয়। আজকের লেখাটি লেখার পূর্বে নোবেল বিজয়ী ড, মোঃ ইউনুসের একটা উক্তি দিয়ে শুরু করতে চাই
বৈশম্য কমাতে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হবে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের যে শিক্ষা ব্যবস্থা সেটা চাকুরীর দিগে নিয়ে যায় কিন্তু আমাদের উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।

প্রথমে আলোচনা করছি বৈশম্য নিয়েঃ
পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র দেশ হল বাংলাদেশ যেখানে পড়া-শোনা সিস্টেমটা একটা লাগামহীন ব্যবসায় পরিনত হয়েছে এবং একটি পণ্য বানানো হয়েছে।যার ক্ষমতা আছে সে তা ভোগ করতে পারবে। মিডিয়ামের কথা বাধ দিলাম। একমিডিয়ামেই ধনী, গরীব এবং প্রবাশালী এর মত শ্রেণি  স্পষ্ট বিদ্যমান যেখানে শিক্ষার সুযোগ সবার জন্য সমান হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা না হয়ে যার টাকা আছে সে পড়াশোনা করতে পারবে অন্যদের জন্য ঈশ্বর থাকে ঐ ভদ্রপল্লিতে।আবেগ দিয়ে বাস্তবতা বিচার করা যায় না। এই আকাশ পাতাল বৈশম্যের কারণে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির নাগরিক তৈরি হচ্ছে যেখানে সমমান অথবা কাছাকাছি মতের এবং যোগ্যতা অর্জন করার কথা। সত্যি কারের নাগরিক তৈরি করার জন্য এই বৈশম্য কমিয়ে আনতে হবে। যদি আমরা বিশ্বাস করি যে শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।

তারপর আলোচনা করছি আমুল পরিবর্তন নিয়েঃ
আমুল পরিবর্তনের জন্য পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাই পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যদি দেখি শিক্ষা ব্যবস্থাটা আছে কেমন, দেখব যে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাই একটা পালতোলা নৌকার মত আছে যার কোন নির্দিষ্ট লক্ষ ও উদ্দেশ্য নেই। 
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ধরন নিচে আলোচনা করা হলঃ
১। বাংলা ভার্সন
২। ইংরেজি ভার্সন/মিডিয়াম
৩। মাদরাসা ভার্সন
৪। কারিগরী ভার্সন
৫। আরো কত নাম না জানা ভার্সন
দিন শেষে সব ভার্সন এক হয়ে একটা চাকরীর জন্য আবেদন করে। ফলে দেখা যায় চাকুরী দাতারা কাউকে চাকরী দিতে পারে না। আবেদন কারীরা যোগ্যতা সম্পন্ন না হওয়ায় আনলিমিটেড বেকারের খাতায় নাম লেখাতে হয়। আমরা জানি চাকুরী করতে গেলে যোগ্যতা হিসেবে যাচাই করা হয় শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভাল ইংরেজি বলা ও লেখার দক্ষতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি/কম্পিউটার নলেজ এবং সাধারণ জ্ঞান। উপরের ভার্সন গুলো একটা দক্ষতা ব্যতিত বাকি গুলো অর্জন করা সম্ভব হয় না। সব ভার্সনের সীমাবদ্ধতা বাধই দিলাম। বাংলা ভার্সনের অধিকাংশ ছাত্র/ছাত্রী আইসিইউ-এর রোগীর মত বেচে থাকাটাই তাদের কাছে বড় স্বার্থকতা। ইংরেজী ভার্সনের অধিকাংশরাই মনে করে তারা ইউরোপের বাসিন্দা। মাদরাসা সিলেবাস এত দূর্বল যে যারা পড়াশোনা করবে না তারা ওখানে গেলে পাশ করে ফেলবে। কারিগরি ও বাধ দিলাম।

তারপর বলেছেন বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা চাকুরীর দিগে নিয়ে যায় তা নিয়ে একটু বলছিঃ
আমি বলি চাকুরি না বেকারত্বের দিগে নিয়ে যায়। অবস্থা দাঁড়ায় চাকুরী চাইচ্ছে তো পাচ্ছে না। আজীবন চেষ্টা করলেও পাবে না, তার একমাত্র কারণ চাকুরী পাওয়ার জন্য যে যোগ্যতা লাগে তা শিখানো হয় না। তাই আবারো বলছি শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন করতে হবে।

আরো বলেছেন আমাদের উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবেঃ
আমিও একমত উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে কিন্তু প্রশ্ন হল এই শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ভাল একজন শিক্ষক হওয়া ও সম্ভব না। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যে যে দক্ষতাগুলো লাগে তা আগে শিখাতে হবে।

তাহলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিতঃ
সব ভার্সন বিলুপ্ত করে যুগো-উপযোগী এবং মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ইংরেজির জন্য ইংরেজি ভার্সনে যাওয়া লাগবে না এমন সিলেবাস প্রনয়ন করতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নতমানের সিলেবাস প্রনয়ন করতে হবে। ধর্ম শিক্ষার জন্য মাদরাসায় যেতে হবে না এমন সিলেবাস প্রনয়ন করতে হবে। চাকুরী পাওয়ার নিশ্চয়তা এবং উদ্যোক্তা তৈরি করে এমন সিলেবাস প্রনয়ন করতে হবে।
প্রয়োজন হলে এভাবে করা যেতে পারেঃ
মেইনস্ট্রিম সিলেবাস থেকে ২৫%
ইংরেজি ভার্সন থেকে ২৫%
কারীগরি থেকে ২৫%
এবং মাদরাসা থেকে ২৫%
মোট ১০০% একটা সিলেবাস করা যেতে পারে।

যার টাকা আছে অথবা অনেক মেধাবী তারাই শিক্ষার সকল সুযোগ পাবে অন্যরা পাবে না তা হবে না।
আমরা চাই বানিজ্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা
আমরা চাই বৈশম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা
আমরা চাই দূরনীতি মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা
আমরা চাই নকল মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা
আমরা মেধা বিকাসের উপোযোগী শিক্ষা পরিবেশ
আমরা চাই ভর্তি বানিজ্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা
সর্বোপুরি সকল প্রতিষ্ঠানের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা যেন শহর এবং গ্রাম কোন পার্থক্য না থাকে।
সম্পাদনায়ঃ
মোঃ মাছুম বিল্লাহ সজিব
একজন স্বপ্নবাজ মানুষ



No comments

Powered by Blogger.