সফলতা মানে কি

“কেউ যদি লাল কাঁচের ভিতর দিয়ে সাদা পদ্মফুলের দিকে তাকায় তবে সে একটি লাল পদ্ম ছাড়া আর কিছু দেখবে না। কিন্তু সেখানে আদৌ কোনো লাল পদ্ম নেই। সুতরাং সমস্যাটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে। তারা ভুল দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করে।” - এম, ডি, গারব্রিক।

আপনি জানেন সবকিছু নির্ভর করে আপনি কিভাবে কোনোকিছুকে গ্রহণ করছেন তার উপর। আপনি যা কিছু সমস্যার মুখোমুখি হন তার মূলে রয়েছে আপনি কিভাবে সবকিছুকে গ্রহণ করেন তার উপর। আপনার দৃষ্টিভঙ্গিই আপনি যা-কিছু করেন তাতে ইতি-নেতি পার্থক্য তৈরী করে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য নিচের এই লেখা ...

কিছু মানুষ আছে যারা প্রতি মুহুর্তে সাফল্যকে অনুসন্ধান করে চলে, চোখের সামনে অনেক মানুষকে সাফল্য পেতে দেখে কিন্তু নিজে কখনও তার সন্ধান পায় না। আবার কারো কাছে সাফল্য পাওয়া অসম্ভব বলে মনে হয়। অবশেষে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, সাফল্য তাদের ভাগ্যে লেখা নেই।
তারা মনে করে সাফল্য নির্ধারিত আছে সৌভাগ্যবান নির্বাচিত কিছু মানুষের ভাগ্যে। আর আমাদের ভাগ্যে কিছুই নেই। আমাদের যা আছে তা-ই নিয়ে সন্তুষ্ট থেকে জীবন চালাতে হবে। আপনার জীবনে যা আছে তা-ই নিয়ে চলতে হবে একথা ঠিক যতণ আপনি এভাবে চিন্তা করবেন। সফলতা আপনার ভাগ্যে নেই একথাও ঠিক যতক্ষণ আপনি আপনার এই ভ্রান্ত চিন্তাধারা না বদলাচ্ছেন। ভুল চিন্তাধারা মনের মধ্যে রেখে কেউ সাফল্যের ধারে কাছেও যেতে পারবে না। যেমন কেউ ভুল ম্যাপ অনুসরণ করে সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারবে না। ভুল ঠিকানা লিখে সঠিক স্থানে চিঠি পাঠাতে পারবে না। তাই সাফলতা লাভ করতে হলে সফলতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা মনের মধ্যে রাখতে হবে।
উন্নয়ন গবেষক ‘জিগ-জিগলার’ বলেছেন, “সাফল্য কোনো ঘটনা নয়, সাফল্য হচ্ছে একটি পদ্ধতি। সাফল্য কোনো গন্তব্য নয়, এটি হচ্ছে একটি নিরবিচ্ছিন্ন ভ্রমণ।” সাফল্য বলতে কোনো গন্তব্য বুঝায় না। কারণ গন্তব্যে পৌঁছে আমরা থেমে যাই। কিন্তু সাফল্য মানে কি থেমে যাওয়া?

আপনার লক্ষ্য অর্জনের পর আপনি যদি থেমে যান তবে আপনার অর্জন আপনি ধরে রাখতে পারবেন না। তাছাড়া একটি ল্য অর্জনের পর আপনি আরও উচ্চতর লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করবেন। তাই নয় কি? তাহলে সাফল্য বলতে লক্ষ্য অর্জন বুঝায় না। সাফল্য অর্থ হলো লক্ষ্যের পানে চলতেই থাকা। সাফল্য হচ্ছে একটি বিরতিহীন ভ্রমণ। তাই বিশেষ কোনো ঘটনার দ্বারা সাফল্য মাপা যায় না।
ধরুন, কোনো ঘটনায় বা কোনো ব্যবসায় আপনার বিপুল অর্থ লাভ হলো। সেই অর্থলাভের নাম সাফল্য নয়। সাফল্য হচ্ছে আপনার সেই যোগ্যতা, আপনার চরিত্রের সেই গুণ যার দ্বারা আপনি ব্যবসায় উন্নতি করলেন। সাফল্য হচ্ছে আপনার সেই যোগ্যতা, সেই গুণ বা সেই চরিত্র যার দ্বারা আপনি ব্যবসায় উন্নতি করেন, অর্থ লাভ করেন এবং অর্থ-সম্পদকে ধরে রাখতে পারেন। তাই সাফল্য সম্পর্কে সঠিক ধারণাই আপনাকে সাফল্য এনে দিতে পারে। সাফল্য মানে বিশেষ কোনো ঘটনা নয়। কোনো গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার নাম সাফল্য নয়। অর্থ-সম্পদ লাভের নাম সাফল্য নয়। সাফল্য হচ্ছে আপনার সেই গুণ বা যোগ্যতা যার দ্বারা আপনি যে কাজেই হাত দেন তাতেই আপনি বিজয়ী হন। সাফল্য হচ্ছে আপনার চরিত্র। আপনার ধ্যানধারণা ও আপনার চিন্তাধারার ফল।
এ প্রসঙ্গে ‘জিম রন’ বলেছেন যে, “সাফল্য অনুসন্ধান করার জিনিষ নয়। সাফল্য হচ্ছে আপনার চরিত্রের সেই গুণ যা প্রত্যেক কাজে আপনার বিজয় নিশ্চিত করে।”

তাহলে সাফল্য মানে ..
“ .. কোনো ঘটনা নয়। এটি একটি চিন্তা-পদ্ধতি।”
“ .. কোনো গন্তব্যে পৌঁছানো নয়। গন্তব্যের পানে চলতেই থাকা।”
“.. কোনো অর্জন নয়। এটা চরিত্রের সেই গুণ যা বিজয়কে আকর্ষণ করে।”
আপনি যদি উপরের কথাগুলি মন দিয়ে বুঝে নেন তবে আপনি স্বীকার করবেন যে, সাফল্যের পিছনে ছুটে আপনি সাফল্যকে ধরতে পারবেন না, এটাকে কোথাও খুঁজেও পাবেন না, উত্তরাধিকার সূত্রেও আপনি এটাকে পেতে পারেন না, অথবা অন্য কারো কাছ থেকে এটা আপনি চেয়ে নিতে পারেন না, এটা আপনার নিজের মধ্যেই রয়েছে। সাফল্যের পিছুধাবন করে সাফল্যকে পাওয়া যায় না। সাফল্যকে চরিত্রগুণ দ্বারা আকর্ষণ করতে হয়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে গুণটি আপনি অর্জন করতে পারেন তা হচ্ছে আপনার নিজের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। নিজের যোগ্যতার উপর এমন দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করুন যে বিশ্বাসে সন্দেহের ছায়ামাত্র থাকবে না। সত্যিসত্যিই প্রত্যেক মানুষের মাঝে দারুণ সব কাজ করার যোগ্যতা রয়েছে কিন্তু সেসব কাজে সফলতা লাভ করার একমাত্র প্রতিবন্ধক সে মানুষ নিজেই। আত্ম-বিশ্বাসের পরিবর্তে তাদের রয়েছে “আত্ম-অবিশ্বাস”। অনেকেই ইচ্ছা করে তারা বিশেষ কিছু অর্জন করবে কিন্তু তারা এতটুকু “আত্ম-বিশ্বাস” করতে পারে না যে সত্যিসত্যিই তারা তা অর্জন করতে পারবে। নিজ যোগ্যতার উপর অবিশ্বাস আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হিসেবে কাজ করে। আমরা অনেকেই উচ্চ আশা, সুন্দর স্বপ্ন আর বড় আকাঙ্খা মনে পুষে থাকি কিন্তু “আত্ম-অবিশ্বাস” কে দূর না করার ফলে সফলতার কাজে আমাদের মেধা, যোগ্যতা আর প্রভাব অনেক কমে যায়।

তাই যারা সফল মানুষ তাদের চরিত্র দেখুন। সফলতার জন্য তীব্র আকাঙ্খা, আত্ম-বিশ্বাস রাখা, কঠোর পরিশ্রম স্বীকার করা, ধৈর্যের সাথে লেগে থাকা- এ সবই সফল চরিত্রের গুণ। অনেক মানুষই তীব্র আকাঙ্খা, কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যকে নিজেদের চরিত্রের অংশ করে নিতে সাহস করেন না। তাই তারা সফলতাকে আকর্ষণ করতে পারেন না। তারা শর্টকাট উপায়ে কিছু অর্জন করে নিয়ে নিজের জায়গায় সরে পড়তে চান।
এভাবে সফলতা আসে না আর আসবেও না কোনদিন...