নামায ও মসজিদের আদব
নামায ও মসজিদের আদব
|
নামাযের আদব:
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অবস্থায় কিবলামূখী অর্থাৎ কা'বামুখী হয়ে নামায পড়তে হয়। দু'জনের মাঝে খালি জায়গা না রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাযের জামাতে কাতার সোজা করা উচিত।
২. নামাযে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ ধ্যাণ আল্লাহ্তা'আলার দিকে নিবদ্ধ রাখতে হয়। হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন,
(আন তা'বুদাল্লাহা কাআন্নাকা তারাহু ওয়া ইল্লাম তাকুন তারাহু ফাইন্নাহু ইয়ারাকা)
অর্থঃ তুমি আল্লাহ্তা'আলার ইবাদত এমনভাবে করো যেন তুমি খোদাকে দেখতে পাচ্ছো। যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তবে মনে করো যে, খোদা নিশ্চয়ই তোমাকে দেখছেন।
(আন তা'বুদাল্লাহা-তুমি আল্লাহ্র ইবাদত এমনভাবে করো, কা'আন্নাকা-যেন তুমি, তারাহু-তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো, ওয়া ইল্লাম্তাকুন তারাহু- এবং তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, ফাইন্নাহু- তাহলে নিশ্চয় তিনি, ইয়ারাকা- তোমাকে দেখছেন)
৩. প্রত্যেক ওয়াক্তের নামায ঠিক সময়ে নিষ্ঠার সাথে আদায় করতে হয়। ফরয নামায মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করাই উত্তম। একান্ত অপারগ হলে ঘরে অন্ততঃ পরিবারের সবাইকে নিয়ে জামাতে পড়া উচিত।
৪. নামাযে যা পাঠ করা হয়, তা ধীরে ধীরে বুঝে পাঠ করা উচিত।
৫. নামায পড়ার সময়ে চোখ খোলা রাখতে হয় এবং এদিক ওদিক না তাকিয়ে সিজ্দার জায়গার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে।
৬. নামায পড়ার সময়ে দেয়ালে বা কোন কিছুতে ঠেস্ দেয়া বা এক পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো ঠিক নয়।
৭. নামাযে নির্ধারিত আরবী দোয়া ছাড়াও মাতৃভাষায় সিজ্দায় আল্লাহ্তা'আলার কাছে প্রার্থনা করা উচিত।
৮. নামাযীর সম্মুখ দিয়ে যাতায়াত করা নিষেধ। এর গুরুত্ব বোঝাবার জন্য হযরত রসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন যে, কাউকে যদি ৪০ বছর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তবুও সে যেন নামাযীর সম্মুখ দিয়ে না যায়।
৯. মসজিদে নামায বাদেও অন্য সময় খোদাতা'আলার যিক্র বা গুণগান করা উচিত।
১০. নামায বা-জামাত হতে থাকলে তৎক্ষণাৎ জামাতে শামিল হওয়া উচিত। পূর্ব ২/১ রাক'আত পড়া হয়ে থাকলে তা ইমামের সালাম ফেরাবার পর পড়ে নিতে হয়। এমন অবস্থায় পূর্বের সুন্নত নামাযও পরে পড়ে নিতে হয়। ইমাম রুকূতে যাওয়ার পর কেউ জামাতে শামিল হলে তাকে সেই রাকা'আত নামাযও পরে পড়তে হবে।
১১. নামাযের জন্য শরীর, জামা-কাপড়, জায়নামায প্রভৃতিকে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে নতুবা নামায হবে না। এ জন্য নামাযের আগে ওযূ এবং প্রয়োজন হলে গোসল করে নিতে হবে।
১২. অসুস্থ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে না পারলে বসে, শুয়ে বা ইশারায় নামায পড়বে।
১৩. যদি কেউ সুন্নত বা নফল নামায পড়তে থাকে এবং তখন ফরয নামাযের জামাত আরম্ভ হয়ে যায় এমতাবস্থায় তার সেই নামায ছেড়ে দিয়ে অথবা সংক্ষেপ করে জামাতে শামিল হওয়া জরুরী। কেননা বা-জামাত ফরয চলাকালীন সময়ে সুন্নত নামায হয় না তাই জুমুআর নামাযের খুতবা শুরু হয়ে গেলেও পূর্বের সুন্নত বাদ দিয়ে খুতবা শোনা উচিত কেননা খুতবা শুনাও ফরয।
১৪. ভ্রমণরত অবস্থায় যানবাহনের ওপর বসা অবস্থায়ও নামায পড়া যায়।
মসজিদের আদব
|
মসজিদ বলতে সিজ্দা করার স্থানকে বুঝায়। এটা খোদাতা'আলার ইবাদতের স্থান। এর যথাযথ আদব ও সম্মান করা কর্তব্য। মসজিদে উচ্চকন্ঠে কথা-বার্তা বলা, বাক-বিতন্ডা, ঝগড়া, মারামারি ও গালাগালি ইত্যাদি এমন কিছু করতে নেই। এগুলো এর মর্যাদার হানিকর।
মসজিদে প্রবেশ করার সময়ে নিম্নলিখিত দোয়াটি পাঠ করতে হয়-
(বিস্মিল্লাহিস্ সালাতা ওয়াস্ সালামু 'আলা রাসূলিল্লাহি, আল্লাহুম্মাফ্তাহলী আব্ওয়াবা রাহমাতিকা)
অর্থ :
আল্লাহ্র নামে (প্রেরণ করছি) আল্লাহ্র রাসূলের ওপর দুরূদ ও শান্তি। হে আল্লাহ্! আমার জন্যে তোমার রহমতের দরজাগুলো খুলে দাও।
(বিস্মিল্লাহি-আল্লাহ্র নামে, সলাত- প্রার্থনা [দুরূদ], ওয়াস্সালামু- ও শান্তি, 'আলা-ওপর, রসূলিল্লাহি- আল্লাহ্র রাসূল, আল্লাহুম্মাফ্তাহলী-এবং আমার জন্যে খুলে দাও, আবওয়াবা-দরজাসমুহ, রাহমাতাকা-তোমার রহমত)
মসজিদে প্রবেশ করার সময় 'আস্সালামু 'আলায়কুম' বলতে হয়। নামায পড়া ছাড়াও অন্য সময়ে মসজিদে আল্লাহ্তা'আলার গুণগান বা যিক্র করা উচিত। মসজিদে কখনো কোন অশ্লীল বা গর্হিত কাজ করতে দেয়া বা করা রীতিমত অন্যায়। পাক-পবিত্র অবস্থায় মসজিদে যেতে হয়। কাঁচা পিঁয়াজ, রসুন প্রভৃতি বিশ্রী গন্ধযুক্ত জিনিস খেলে মুখ ভাল করে না ধুয়ে মসজিদে যাওয়া ঠিক নয়। মসজিদে থু-থু ফেলা, নাক ঝাড়া বা হাত-পা শরীর মোড়ামুড়ি করা উচিত নয়।
মসজিদ হতে বের হবার সময়ও উল্লেখিত দোয়াটি পাঠ করতে হয়। তবে 'ওয়াফ্তাহ্লী আবওয়াবা রাহমাতিকা' স্থলে 'ওয়াফ্তাহ্লী আবওয়াবা ফাযলিকা' পড়তে হয়। এর অর্থ- আমার জন্যে তোমার ফযলের দরজাগুলো খুলে দাও।
No comments