আযান ও একামত
আযান ও একামত
|
আযান
নামাযের ওয়াক্তে যে সব কালাম বা কথা দ্বারা নামাযীদেরকে আহ্বান করা হয়, একে আযান বলে। যিনি আযান দেন তাকে বলা হয় মুয়ায্যিন। মুয়ায্যিন সাহেবকে কিবলামুখী হয়ে কোন উঁচু জায়গায় বা মসজিদের মিনারের ওপরে দাঁড়িয়ে দু' কানে শাহাদত আঙুল দিয়ে নিম্নোক্ত আযানের কথাগুলো লম্বা করে উচ্চকন্ঠে মধুর স্বরে উচ্চারণ করতে হয়।
আযানের কালাম (কথাগুলো)
(আল্লাহু আকবার)
অর্থ- আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। (চারবার)
(আশ্হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্)
অর্থ-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। (দু'বার)
(আশ্হাদু আন্না মুহাম্মার্দা রাসূলুল্লাহ্)
অর্থ-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্র প্রেরিত পুরুষ। (দু'বার)
(হাইয়্যা'আলাস সালাহ্)
অর্থ- এসো নামাযের দিকে। (ডান দিকে মুখ করে বলতে হয়। দু'বার)
(হাইয়্যা'আলাল ফালাহ্)
অর্থ- এসো সফলতার দিকে। (বাম দিকে মুখ করে বলতে হয়। দু'বার)
(আল্লাহু আক্বার)
অর্থ- আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ। (দু'বার)
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্)
অর্থ- আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই।
ফজরের ওয়াক্তের আযানে হাইয়্যা আলাল ফালাহ্ বলার পর দু'বার
(আস্সালাতু খায়রুম্ মিনান্নাওম)
অর্থ-(নামায নিদ্রা অপেক্ষা উত্তম) বলতে হয়।
ইকামত
ফরয নামায আরম্ভ করার পূর্বে ইকামত বলতে হয়। ইকামত আযানের মতই। তবে, আযানের কথাগুলো ইকামতের সময় চার বারের স্থলে দু'বার এবং দু'বারের স্থলে একবার করে কিছুটা দ্রুত উচ্চারণ করতে হয়। কিন্তু শেষে আল্লাহু আক্বার দু'বার বলতে হয় (মিশ্কাত, কিতাবুল আযান)। এছাড়া 'হাইয়্যা 'আলাল ফালাহ্' বলার পর দু'বার (কাদ্ক্বামাতিস্ সলাহ্) বলতে হয়। এর অর্থ- এখনই নামায আরম্ভ হচ্ছে। মুয়ায্যিন অনুপস্থিত থাকলে অন্য যে কেউ ইমামের অনুমতি সাপেক্ষে ইকামত বলতে পারেন। ইকামতের সময় কানে আঙ্গুল দিতে হয় না, বা ডানে ও বামে মুখ ফেরাতে হয় না।
আযানের উত্তর
|
আযান দেয়ার সময় আযানের শ্রোতাগণ মুয়ায্যিনের কথাগুলো মনে মনে আওড়াবেন তবে মুয়াযযিন যখন 'হাইয়া'আলাস্সালাহ' এবং 'হাইয়্যা 'আলাল ফালাহ্' উচ্চারণ করবেন তখন শ্রোতারা বলবেন- ('লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ্)। এর অর্থঃ আল্লাহ্র সাহায্য ছাড়া কোন অসৎ কার্য হতে বিরত থাকা এবং কোন সৎকাজ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। এছাড়া মুয়ায্যিন যখন ফজরের আযানে বলবেন 'আস্সালাতু খায়রুমমিনান্নাওম' তখন শ্রোতাদেরকে বলতে হবে সাদাকতা ও বারারতা অর্থঃ সত্য বলেছেন, কল্যাণের কথা বলেছেন।
আযানের শেষ পঠিতব্য দোয়া
|
আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ্দা'ওয়াতিত্তাম্মাতি ওয়াস্সালাতিল ক্বায়িমাহ্ আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাতা ওয়াব্'আস্হূ মাকামাম্মাহমুদা নিল্লাযী ওয়া 'আত্তাহূ, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী'আদ।)
হে আল্লাহ! প্রভু (তুমি) এ পরিপূর্ণ আহ্বানের এবং চিরস্থায়ী নামাযের। তুমি মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নৈকট্যের উসিলা, মহত্ত্ব এবং সর্বাপেক্ষা প্রশংসিত মার্গে (অর্থ্যাৎ মাকামে মাহমুদে) আবির্ভূত করো তাঁকে, যার ওয়াদা তুমি দিয়েছো তাঁকে। নিশ্চয় তুমি কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করো না।
রব্বা-প্রভু, হাযিহি-এ, দাওয়াতে-আহ্বান, তাম্মাতে-পরিপূর্ণ, ওয়াস্সালাতি- এবং প্রার্থনার, কায়িমাহ্-চিরস্থায়ী, আতে-তুমি দান করো, ওয়াসীলাতা-নৈকট্যের উসিলা, ওয়াল ফাযীলাতা-এবং মহত্ত্ব, ওয়াব্'আসহূ-এবং তাঁকে আবির্ভূত করো, মাকামাম্মাহ্মুদা-সর্বপেক্ষা প্রশংসিত, ইন্নাকা লা- নিশ্চয় না/কখনো না, তুখ্লিফু-তুমি ভঙ্গ করো, মী'আদ-ওয়াদা)
নামাযের রীতি বা তরিকা
|
নামাযের নিয়্যত ও জায়নামাজের দোয়া:
নামাযের নিয়্যত হিসেবে সাধারণভাবে যে বাক্যগুলো প্রচলিত আছে হযরত রসূলে করীম (সাঃ) বা সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সে রকম কোন নিয়্যত পাঠ করেন নি। তিনি নিম্নোক্ত কুরআনী আয়াত পাঠের মাধ্যমে নামায শুরু করতেন। মিশ্কাত শরীফে ধারাবাহিকভাবে নামাযের যে নিয়মকানুন দেয়া হয়েছে তাতে প্রচলিত নিয়্যতের কোন উল্লেখ নেই। ইমাম গায্যালী (রহঃ) তাঁর 'কিমিয়ায়ে সা'আদাত' পুস্তকে লিখেছেন, 'নিয়্যত করার বিষয়, পড়ার বিষয় নয়'।
জায়নামাযে দাঁড়িয়ে নীচের কুরআনী আয়াত পড়তে হয়-
(ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজ্হিয়া লিল্লাযী ফাতারাস্সামাওয়াতি ওয়াল র্আযা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশ্রিকীন)
অর্থঃ আমি আমার পূর্ণ মনযোগ একনিষ্ট ভাবে তাঁরই দিকে নিবদ্ধ করছি, যিনি আকাশসমূহ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরীকদের অন্তর্ভুক্ত নই (সূরা আনআম : ৮০)
(ওয়াজ্জাহতু-আমি নিবদ্ধ করছি, ওয়াজ্হিয়া-আমার পূর্ণ মনোযোগ, লিল্লাযী-তাঁরই দিকে যিনি, ফাতারা-সৃষ্টি করেছেন, সামাওয়াতি-আকাশসমূহ, ওয়া- এবং, আরযা- পৃথিবী, হানিফাও-একনিষ্ঠভাবে, মা-না, আনা-আমি, মিন-অন্তভুর্ক্ত হওয়া, আল্ মুশ্রিকীন-মুশরিকদের।)
তক্বীরে তাহ্রীমা
নামায পড়ার জন্যে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে উল্লিখিত আয়াতটি (তওজীহ) পাঠ করার পর দু'হাত কাঁধ বা কান পর্যন্ত উঠিয়ে তক্বীরে তাহ্রীমা অর্থাৎ আল্লাহু আক্বর বলে হাত দু'টিকে বুকের উপর এমনভাবে বাঁধতে হয়, যেন ডান হাত বাম হাতের ওপরে থাকে এবং ডান হাতের আঙ্গুলের সামনের অংশ বাম হাতের কনুই প্রায় স্পর্শ করে। (মিশকাত দ্রষ্টব্য)। এরপর সানা, তাআ'ব্বুয ও তাস্মীয়া পাঠ করতে হয়। সানা ও তাআ'ব্বুয প্রথম রাকা'আতের শুরুতে পাঠ করার পর আর পাঠ করতে হয় না।
সানা
(সুব্হানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়াতাবারাকাস্মুকা ওয়া তা'আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা)
অর্থঃ হে আল্লাহ্! পবিত্রতা তোমারই এবং প্রশংসা তোমারই, পরম মঙ্গলময় তোমার নাম! অতি উচ্চ তোমার মর্যাদা। এবং তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।
(সুব্হানাকা-তুমি পবিত্র, আল্লাহুম্মা-হে আল্লাহ্, ওয়া-এবং, বিহামদিকা-তোমার প্রশংসাসহ, তাবারাকা-পরম মঙ্গলময়, ইস্মুকা-তোমার নাম, তা'আলা-অতি উচ্চ, জাদ্দুকা-তোমার মর্যাদা, লা-নেই, ইলাহা-উপাস্য, গায়রুকা-তুমি ছাড়া)
তা'আব্বুয
(আ'উযু বিল্লাহি মিনাশ্ শায়ত্বার্নি রাজীম)
অর্থঃ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
(আ'উযু-আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি। বিল্লাহি-আল্লাহ্র নিকট, মিন-থেকে, শায়ত্বানির রাজীম- বিতাড়িত শয়তান )
তাস্মিয়া
(বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম)
অর্থঃ আল্লাহ্র নামে (আরম্ভ করছি), যিনি পরম করুণাময় অযাচিত-অসীম দানকারী, বার বার কৃপাকারী।
(বিসমিল্লাহ্-আল্লাহ্র নামে, রাহ্মান-পরম করুণাময় অযাচিত-অসীম দানকারী, রাহীম-বার বার কৃপাকারী)
No comments