শিশুরা কেন স্কুলে যেতে চায় না.....

শিশুরা কেন স্কুলে যেতে চায় না.....
অনেক শিশুই স্কুলে যেতে চায় না বা স্কুলে যাওয়ার সময় স্কুলে না যাওয়ার জন্য নানা বাহানা ধরে। স্কুলে যাওয়ার আগে কান্নাকাটি করে বা তার মাথাব্যথা বা শারীরিক কোনো অসুবিধার কথা বলে। এতে অনেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। শিশুর ভেতর কোনো ভীতির সৃষ্টি হয়েছে যার জন্য সে স্কুলে যেতে চায় না। এ প্রসঙ্গে যে বিষয়গুলো বিশেষভাবে লক্ষ করা দরকার তাহলো :
স্কুলের নতুন পরিবেশ
------------------------
একজন শিশু ৪/৫ বছর পর্যন্ত পরিবারে বড় হয়। হঠাৎ করে একটা নতুন পরিবেশে অপরিচিত শিশুদের সঙ্গে মিশতে সমস্যা হয় তার। ফলে সে স্কুলে যেতে চায় না। সাধারণত অন্তর্মুখী স্বভাবের শিশুরা একা থাকতে বেশি পছন্দ করে বলে স্কুলের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ তার কাছে ভালো লাগে না। ফলে সে স্কুলে যেতে অনীহা প্রকাশ করে।
ক্লাসের পড়া না বোঝা না পারা
------------------------
শিক্ষকরা যদি আন্তরিক না হন অর্থাৎ কে ক্লাসে পড়া পারছে না বা বুঝতে পারছে না তা যদি চিহ্নিত করতে না পারেন তাহলে অপারগ শিশুরা পড়ার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে এবং স্কুলে যেতে চায় না।
শিক্ষকদের তিরস্কার/শাস্তি
------------------------
শিক্ষক যদি শিশুদের ভালোভাবে গ্রহণ না করে তিরস্কার করেন অথবা পড়া না পারলে অপমান করেন বা শাস্তি দেন তাহলে শিশুদের স্কুলের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়।
সহপাঠীদের ব্যবহার: কিছু সহপাঠী থাকে উগ্র বা অস্থির প্রকৃতির, যাদের আচরণ অন্যদের বিরক্তির সৃষ্টি করে। শারীরিক ত্রুটির কারণে অন্যকে নানাভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিতেও দেখা যায় তাদের। ফলে এই ধরনের শিশু স্কুলে যেতে চায় না।
নিরাপত্তাহীনতা
------------------------
অনেক শিশু নিরাপত্তার কারণে স্কুলে যেতে চায় না। এটা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। গ্রামে ও শহরে আবার আলাদা বিষয়ে শিশুরা ভয় পায়। একটা শিশু স্কুলে যাওয়ার পথে বিভিন্ন পোকামাকড় দেখে ভয় পেতে পারে। আবার শহরের রাস্তায় দীর্ঘ জ্যাম বা গাড়ির দুর্ঘটনা বা ছেলে ধরার গুজবের কারণে ভয় পায়।
পরিবারে অশান্তি
------------------------
পরিবারে অভাবের কারণে বা অন্য কোনো কারণে যদি শিশুর বাবা-মায়ের মধ্যে অশান্তি হয়, শিশুদের সামনে যদি বাবা-মা ঝগড়া করে বা আজেবাজে কথা বলে গালি দেয় তাহলে শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তারা পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে স্কুলে যেতে চায় না।
শিশুদের শিক্ষাসামগ্রীর চাহিদা পূরণ না করা
------------------------------------------------
শিশুরা জানে না যে তাদের চাহিদা তাদের বাবা-মা হয়তো পূরণ করতে পারছেন না। কিন্তু তাদেরই সহপাঠী দামি কলম, পেন্সিল বক্স, স্কুলব্যাগ বা টিফিন পাচ্ছে। তখন সেই শিশুরা হীনম্মন্যতায় ভোগে। তারা স্কুলে যেতে অনীহা প্রকাশ করে।
বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকা
------------------------
অনেক স্কুলে খেলাধুলার কোনো মাঠ নেই। এমনকি স্কুলে সমাবেশ করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। লেখাপড়ার একঘেয়েমি দূর করা তথা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধনের জন্য খেলাধুলা, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, শিক্ষাসফর ইত্যাদি বিষয়গুলো দরকার। আমাদের স্কুলগুলোতে বিশেষ করে শহরের অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুলে খেলাধুলার কোনো মাঠ নেই। এটা শিশু কিশোরদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গতি না রেখে অধিক পাঠ্যবই চাপিয়ে দেওয়া
------------------------------------------------
বর্তমানে কেজি স্কুলগুলোতে সরকারি স্কুলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বই পড়ানো হয়। সাময়িকভাবে শিশু পারলেও তার লেখাপড়া তথা স্কুলের প্রতি অনীহার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
পড়াশোনার মতো একটা বিষয়ে যদি শিশুরা আনন্দ না পায় তাহলে তারা তো স্কুলে যেতে চাইবে না। স্কুলের শিক্ষকরা যদি আন্তরিক হন, শিশুদের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা, মায়ামমতা বেশি থাকে আর শিশুরা যদি শিক্ষকের এই স্নেহ-ভালোবাসা পায় তাহলে সেই শিশুর স্কুলে না যাওয়ার কারণ নেই। শিক্ষকদের ভালোবাসা স্নেহ, মমতা অন্য সব বাধাকে অতিক্রম করতে পারে। তারপর স্কুলে শুধু টয়লেট থাকলেই হবে না এর ব্যবহার থাকতে হবে। আমি এক স্কুল গিয়ে দেখেছি টয়লেট তালামারা। শিশুরা বাইরে মল ত্যাগ করছে। কিন্তু অনেক শিশু আছে বিশেষ করে মেয়েশিশুরা একটা মারাত্মক বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে। অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে তারা স্কুলে যেতে চায় না। এইজন্য টয়লেট ব্যবহারযোগ্য করতে হবে।
সর্বোপরি শিশুর শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে মানসিক সুস্থতা থাকতে হবে। শিশুদের শুধু বইয়ের ভেতর না রেখে প্রকৃতি থেকে শেখার সুযোগ দিতে হবে। শিশুদের উৎসাহ ও প্রেরণা দিতে হবে। তাদের সামনে কোনো নেতিবাচক ধারণা দেওয়া যাবে না। বাবা-মাকে শিশুদের সময় দিতে হবে, শিশুকে ভালোবাসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.