কবীরা গুনাহ হতে বেচে থাকতে হলে
কবীরা গুনাহ হতে বেচে থাকতে হলে ...
এখানে প্রতিটি কবীরা গুনাহের আলোচনার সাথে একটি বা দু’টি করে কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুসারে কোন কোন স্থানে বিষয়টির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
কবীরা গুনাহ কি?
▬▬▬▬▬▬
অনেকেই মনে করেন,কবীরা গুনাহ মাত্র সাতটি যার বর্ণনা একটি হাদীসে এসেছে। মূলতঃ কথাটি ঠিক নয়। কারণ, হাদীসে বলা হয়েছে, উল্লিখিত সাতটি গুনাহ কবীরা গুনাহের অর্ন্তভুক্ত। এ কথা উল্লেখ করা হয়নি যে, কেবল এ সাতটি গুনাহই কবীরা গুনাহ, আর কোন কবীরা গুনাহ নেই।
একারণেই আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন- কবীরা গুনাহ সাত হতে সত্তর পর্যন্ত-(তাবারী বিশুদ্ধ সনদে)।
ইমাম শামসুদ্দিন আয-যাহাবী বলেন, উক্ত হাদীসে কবীরা গুনাহের নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা করা হয়নি।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রহ. বলেন, কবীরা গুনাহ হল: যে সব গুনাহের কারণে দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক শাস্তির বিধান আছে এবং আখিরাতে শাস্তির ধমক দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যে সব গুনাহের কারণে কুরআন ও হাদীসে ঈমান চলে যাওয়ার হুমকি বা অভিশাপ ইত্যাদি এসেছে তাকেও কবীরা গুনাহ বলে।
ওলামায়ে কেরাম বলেন, তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোন কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না আবার একই ছগীরা গুনাহ বার বার কারার কারণে তা ছগীরা (ছোট ) গুনাহ থাকে না।
ওলামায়ে কেরাম কবীরা গুনাহের সংখ্যা সত্তরটির অধিক উল্লেখ করেছেন। যা নীচে তুলে ধরা হলঃ
১ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
الشرك بالله
আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা
শিরক দুই প্রকারঃ
১. শিরকে আকবার, আল্লাহর সাথে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর ইবাদত করা। অথবা যে কোন প্রকারের ইবাদতকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য নিবেদন করা যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে প্রাণী জবেহ করা ইত্যাদি।
যদি কোন ব্যক্তি ইবাদতের কিছু অংশে গাইরুল্লাহকে শরীক করার মুহূর্তে আল্লাহর ইবাদত করে তবুও তা শিরক ।
দীলল:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ (النساء:৪৮)
‘‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তার সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।’’ (নিসা: ৪৮)
২.শিরকে আসগার বা ছোট শিরক: রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে আমল করা ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ ﴿5﴾ الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ ﴿6﴾ (الماعون: ৪-৬)
‘‘অতএব দুর্ভোগ সে সব মুসল্লীর যারা তাদের সালাত সম্পর্কে বে-খবর যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।’’ (মাউন:৪-৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন:
أٍنا أغنى الشركاء عن الشرك من عمل عملا اشرك معي فيه غيري تركته وشركه. (رواه مسلم:৫৩০০)
‘‘আমি অংশিদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে, আমি ঐ ব্যক্তিকে তার শিরকে ছেড়ে দেই।’’ (মুসলিম:৫৩০০)
২ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
قتل النفس
মানুষ হত্যা করা
আল্লাহ বলেন:—
وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا ﴿67﴾ وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا ﴿68﴾ يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا ﴿69﴾ إِلَّا مَنْ تَابَ وَآَمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا
(الفرقان:৬৮-৭০)
‘‘এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না,আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যারা এসব কাজ করে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামত দিবসে তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং লাঞ্চিত অবস্থায় সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু তারা নয়, যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে।’’ (সূরা আল-ফোরকান:৬৮-৭০)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা হত্যা করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং শরীয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যা করা কবীরা গুনাহ।
৩নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬▬▬
السحر
যাদু
আল্লাহ বলেন:
وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ. (البقرة:১০২)
‘‘কিন্তু শয়তানেরা কুফরী করে মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।’’ (বাকারা:১০২)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
اجتنبوا السبع الموبقات الشرك بالله والسحر وقتل النفس التي حرم الله إلا بالحق وأكل الرباء وأكل مال اليتيم والتولي يوم الزحف وقذف المحصنات المؤمنات الغافلات. (رواه البخاري:২৫৬০)
‘‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেচে থাকবে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ ঐ ধ্বংসাত্মাক বিষয় গুলি কি? তিনি জবাবে বলেন
১- আল্লাহর সাথে শরিক করা, ২- যাদু করা, ৩- অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আললাহ তাআলা হারাম করে দিয়েছেন, ৪- সুদ খাওয়া, ৫-এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, ৬- জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা, ৭- সতী সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া।’’ (বুখারী:২৫৬)
৪ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
ةرك الصلاة বা (সালাত ত্যাগ করা)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ﴿59﴾ إِلَّا مَنْ تَابَ وَآَمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ﴿60﴾
(مريم ৫৯-৬০)
‘‘তাদের পর আসলো (অপদার্থ) বংশধর। তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হল, সুতরাং তারা অচিরেই কু-কর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।’’ (মারইয়াম ৫৯-৬০)
হাদীসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
بين الرجل وبين الشرك والكفر ةرك الصلاة. (مسلم:১১৬)
‘‘কোন মুমিন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত ত্যাগ করা।’’ (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر. (أحمد:২১৮৫৯)
‘‘আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত, যে তা পরিত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।’’ (আহমাদ:২১৮৫৯)
৫নং কাবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
منع الزكاة বা যাকাত আদায় না করা
আল্লাহ বলেন-
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
(آل عمران:১৮০)
‘‘আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে। এই কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর হবে। যাতে তারা কার্পণ্য করবে সে সকল ধন সম্পদ কিয়ামতের দিনে তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে।’’ (আল ইমরান:১৮০)
৬নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
إفطار يوم من رمضان بلا عذر
সঙ্গত কারণ ছাড়া রমযানের সওম ভঙ্গ করা বা না রাখা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
بني الإسلام على خمس شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله وإقام الصلوة وإيناء الزكاة وحج البيت وصوم رمضان.
(رواه البخارى:৭)
‘‘ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, (২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা, (৩) যাকাত দেয়া, (৪) হজ্জ করা, (৫) রামযান মাসের সওম রাখা।’’] (বুখারী:৭)
৭ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
ترك الحج مع القدرة عليه
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করা
আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন-
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ ﴿97﴾
(آل عمران: ৯৭)
‘‘আর এ ঘরের হজ্জ করা সে সকল মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য যারা সেথায় যাওয়ার সামর্থ্য রাখে । আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে রাখুক আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই মখোপেক্ষী নয়।’’ (আল-ইমরান:৯৭)
৮নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
عقوق الوالدين
মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
الا أنيئكم بأكبر الكبائر الإشراك بالله وعقوق الوالدين وقول الزور..
(رواه البخارى:৬৪৬০)
‘‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ কি তা বলে দিব না ? আর তা হল আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’’ (বুখারী:৬৪৬)
৯ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
هجر الأقارب وتقطيع الأرحام
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং নিকট আত্মীয়দের পরিত্যাগ করা।
আল্লাহ বলেন-
فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ
(محمد: ২২-২৩)
‘‘ক্ষমতা লাভের পর স্মভবত: তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিস্মপাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিহীন করেন।’’ (মুহাম্মদ:২২-২৩)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لايدخل الجنة قاطع رحم. . (رواه المسلم:৪৬৩৩)
‘‘আত্মীয়তার ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’’ ( মুসলিম:৪৬৩৩)
১০ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
الزنا
ব্যভিচার করা
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا (الإسراء: ৩২)
‘‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না । নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ওঅতি মন্দ পথ।’’ (ইসরা:৩২)
রাসূলেকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إذا زنى العبد خرج منه الإيمان فكان على رأسه كالظلة فإذا أقلع رجع إليه
(رواه الترمذى:২৫৪৯)
‘‘যখন কোন মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার থেকে ঈমান বের হয়ে যায়। ঈমান তার মাথার উপর ছায়ার মত অবস্থান করে যাখন সে বিরত থাকে ঈমান আবার ফিরে আসে।’’ (তিরমিযি:২৫৪৯)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
كتب على ابن آدم نصيبه من الزنا مدرك ذلك لا محالة فالعينان زناهما النظر والأذنان زناهما الاستماع واللسان زناهما الكلام واليد زناهما البطش والرجل زناهما الخطى والقلب يهوي ويتمنى ويصدق ذلك الفرج. (رواه مسلم:৪৮০২)
‘‘আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চক্ষুর ব্যভিচার হল দৃষ্টি এবং তার দুই কানের ব্যভিচার শ্রবণ, মুখের ব্যভিচার হল কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হল স্পর্শ করা ও পায়ের ব্যভিচার হল পদক্ষেপ আর অন্তরে ব্যভিচারের আশা ও ইচ্ছার সঞ্চার হয়, অবশেষে লজ্জাস্থান একে সত্যে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।’’ (মুসলিম:৪৮০২)
১১ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
اللواط وإتيان المرأة في الدبر
পুং মৈথূন এবং স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করা
আল্লাহ বলেন-
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِنَ الْعَالَمِينَ ﴿80﴾ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِنْ دُونِ النِّسَاءِ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ مُسْرِفُونَ ﴿81﴾ (الأعراف: ৮০-৮১)
‘‘এবং লুতকেও পাঠিয়েছিলাম, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘‘তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারী বাদদিয়ে পুরুষের নিকট গমন কর, তোমরা তো সীমালঙ্গনকারী সম্প্রদায়।’’ (আ‘রাফ; ৮০-৮১)
রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من وجدتموه يعمل عمل قوم لوط فاقتلوا الفاعل والمفعول. (رواه الترمذى:১২৭৬)
‘‘তোমরা কাউকে লূত সম্প্রদায়ের কাজ (সমকাম) করতে দেখলে যে করে এবং যার সাথে করা হয় উভয়কে হত্যা কর।’’ (তিরমিযি:১২৭৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন-
لا ينظر الله إلى رجل اتى رجلا او إمرآة في الدبر. (الترمذي:১০৮৬ صحيح الجامع)
‘‘আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, যে কোন পুরুষের সাথে সমাকামিতায় লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করে।’’ (তিরমিযী , সহীহ আল জামে)
১২ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
أكل الربا
সুদ খাওয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন-
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ. (البقرة: ২৭৫)
‘‘যারা সুদ খায় তারা দাড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়।’’ (বাকারা : ২৭৫)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
الربا ثلاثة وسبعون بابا أيسرها مثل أن ينكح الرجل أمه وإن أربى الربي عرض الرجل المسلم. (رواه الحاكم. صحيح الجامع)
‘‘সুদের গুনাহের ৭৩টি স্তর রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে হাল্কা হল নিজ মাতাকে বিবাহ করা। সর্বনিম্নস্তর হলো কোন মুসলমানের ইজ্জত সম্ভ্রম হরণ করা।’’ (হাকেম, সহীহ আল জামে)
১৩ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
أكل مال اليتيم
এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করা
আল্লাহ বলেন-
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا ﴿10﴾
. (النساء: ১০)
‘‘যারা এতিমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্তরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।’’ (নিসা: ১০)
১৪ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
الكذب على الله عز وجل وعلى رسوله
আল্লাহ এবং তার রাসূলৈর উপর মিথ্যা আরোপ করা
আল্লাহ বলেন-
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى اللَّهِ وُجُوهُهُمْ مُسْوَدَّةٌ . (الزمر: ৬০)
‘‘যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে কেয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কাল দেখবেন।’’ (যুমার: ৬০)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من كذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.(البخاري:১০৭)
‘‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেন তার অবস্থান জাহান্নাম করে নেয়।’’ (বুখারী:১০৭)
হাসান রাহ. বলেন- স্মরণ রাখতে হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল যা হারাম করেননি তা হারাম করল, আর যা হালাল বলেননি তা হালাল বলল, সে আল্লাহ ও তার রাসূল এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করল এবং কুফরী করল।’’
১৫ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
الفرار من الزحف
যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা
আল্লাহ বলেন-
وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَى فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
(الأنفال:16)
‘‘&আর যে ব্যক্তি লড়াইয়ের ময়দান হতে পিছু হটে যাবে সে আল্লাহর গযব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তন করতে কিংবা নিজ সৈন্যদের নিকট স্থান নিতে আসে সে ব্যতীত।’’ (আনফাল:১৬)
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্তমান যুগে মুসলমানরা শুধু যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে না বরং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে কোন ধরনের অংশই নিতেই চায় না। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
এখানে প্রতিটি কবীরা গুনাহের আলোচনার সাথে একটি বা দু’টি করে কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুসারে কোন কোন স্থানে বিষয়টির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
কবীরা গুনাহ কি?
▬▬▬▬▬▬
অনেকেই মনে করেন,কবীরা গুনাহ মাত্র সাতটি যার বর্ণনা একটি হাদীসে এসেছে। মূলতঃ কথাটি ঠিক নয়। কারণ, হাদীসে বলা হয়েছে, উল্লিখিত সাতটি গুনাহ কবীরা গুনাহের অর্ন্তভুক্ত। এ কথা উল্লেখ করা হয়নি যে, কেবল এ সাতটি গুনাহই কবীরা গুনাহ, আর কোন কবীরা গুনাহ নেই।
একারণেই আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন- কবীরা গুনাহ সাত হতে সত্তর পর্যন্ত-(তাবারী বিশুদ্ধ সনদে)।
ইমাম শামসুদ্দিন আয-যাহাবী বলেন, উক্ত হাদীসে কবীরা গুনাহের নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা করা হয়নি।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা রহ. বলেন, কবীরা গুনাহ হল: যে সব গুনাহের কারণে দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক শাস্তির বিধান আছে এবং আখিরাতে শাস্তির ধমক দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যে সব গুনাহের কারণে কুরআন ও হাদীসে ঈমান চলে যাওয়ার হুমকি বা অভিশাপ ইত্যাদি এসেছে তাকেও কবীরা গুনাহ বলে।
ওলামায়ে কেরাম বলেন, তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোন কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না আবার একই ছগীরা গুনাহ বার বার কারার কারণে তা ছগীরা (ছোট ) গুনাহ থাকে না।
ওলামায়ে কেরাম কবীরা গুনাহের সংখ্যা সত্তরটির অধিক উল্লেখ করেছেন। যা নীচে তুলে ধরা হলঃ
১ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
الشرك بالله
আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা
শিরক দুই প্রকারঃ
১. শিরকে আকবার, আল্লাহর সাথে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর ইবাদত করা। অথবা যে কোন প্রকারের ইবাদতকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য নিবেদন করা যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে প্রাণী জবেহ করা ইত্যাদি।
যদি কোন ব্যক্তি ইবাদতের কিছু অংশে গাইরুল্লাহকে শরীক করার মুহূর্তে আল্লাহর ইবাদত করে তবুও তা শিরক ।
দীলল:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ (النساء:৪৮)
‘‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তার সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।’’ (নিসা: ৪৮)
২.শিরকে আসগার বা ছোট শিরক: রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে আমল করা ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ ﴿5﴾ الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ ﴿6﴾ (الماعون: ৪-৬)
‘‘অতএব দুর্ভোগ সে সব মুসল্লীর যারা তাদের সালাত সম্পর্কে বে-খবর যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।’’ (মাউন:৪-৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন:
أٍنا أغنى الشركاء عن الشرك من عمل عملا اشرك معي فيه غيري تركته وشركه. (رواه مسلم:৫৩০০)
‘‘আমি অংশিদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে, আমি ঐ ব্যক্তিকে তার শিরকে ছেড়ে দেই।’’ (মুসলিম:৫৩০০)
২ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
قتل النفس
মানুষ হত্যা করা
আল্লাহ বলেন:—
وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا ﴿67﴾ وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا ﴿68﴾ يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا ﴿69﴾ إِلَّا مَنْ تَابَ وَآَمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا
(الفرقان:৬৮-৭০)
‘‘এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না,আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যারা এসব কাজ করে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামত দিবসে তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং লাঞ্চিত অবস্থায় সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু তারা নয়, যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে।’’ (সূরা আল-ফোরকান:৬৮-৭০)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা হত্যা করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং শরীয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যা করা কবীরা গুনাহ।
৩নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬▬▬
السحر
যাদু
আল্লাহ বলেন:
وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ. (البقرة:১০২)
‘‘কিন্তু শয়তানেরা কুফরী করে মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।’’ (বাকারা:১০২)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
اجتنبوا السبع الموبقات الشرك بالله والسحر وقتل النفس التي حرم الله إلا بالحق وأكل الرباء وأكل مال اليتيم والتولي يوم الزحف وقذف المحصنات المؤمنات الغافلات. (رواه البخاري:২৫৬০)
‘‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেচে থাকবে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ ঐ ধ্বংসাত্মাক বিষয় গুলি কি? তিনি জবাবে বলেন
১- আল্লাহর সাথে শরিক করা, ২- যাদু করা, ৩- অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আললাহ তাআলা হারাম করে দিয়েছেন, ৪- সুদ খাওয়া, ৫-এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, ৬- জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা, ৭- সতী সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া।’’ (বুখারী:২৫৬)
৪ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
ةرك الصلاة বা (সালাত ত্যাগ করা)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا ﴿59﴾ إِلَّا مَنْ تَابَ وَآَمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ﴿60﴾
(مريم ৫৯-৬০)
‘‘তাদের পর আসলো (অপদার্থ) বংশধর। তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হল, সুতরাং তারা অচিরেই কু-কর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।’’ (মারইয়াম ৫৯-৬০)
হাদীসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
بين الرجل وبين الشرك والكفر ةرك الصلاة. (مسلم:১১৬)
‘‘কোন মুমিন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত ত্যাগ করা।’’ (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر. (أحمد:২১৮৫৯)
‘‘আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত, যে তা পরিত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।’’ (আহমাদ:২১৮৫৯)
৫নং কাবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
منع الزكاة বা যাকাত আদায় না করা
আল্লাহ বলেন-
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
(آل عمران:১৮০)
‘‘আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে। এই কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর হবে। যাতে তারা কার্পণ্য করবে সে সকল ধন সম্পদ কিয়ামতের দিনে তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে।’’ (আল ইমরান:১৮০)
৬নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
إفطار يوم من رمضان بلا عذر
সঙ্গত কারণ ছাড়া রমযানের সওম ভঙ্গ করা বা না রাখা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
بني الإسلام على خمس شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله وإقام الصلوة وإيناء الزكاة وحج البيت وصوم رمضان.
(رواه البخارى:৭)
‘‘ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (১) এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্যিকার উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, (২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা, (৩) যাকাত দেয়া, (৪) হজ্জ করা, (৫) রামযান মাসের সওম রাখা।’’] (বুখারী:৭)
৭ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
ترك الحج مع القدرة عليه
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করা
আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন-
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ ﴿97﴾
(آل عمران: ৯৭)
‘‘আর এ ঘরের হজ্জ করা সে সকল মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য যারা সেথায় যাওয়ার সামর্থ্য রাখে । আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে রাখুক আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই মখোপেক্ষী নয়।’’ (আল-ইমরান:৯৭)
৮নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
عقوق الوالدين
মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
الا أنيئكم بأكبر الكبائر الإشراك بالله وعقوق الوالدين وقول الزور..
(رواه البخارى:৬৪৬০)
‘‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ কি তা বলে দিব না ? আর তা হল আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’’ (বুখারী:৬৪৬)
৯ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
هجر الأقارب وتقطيع الأرحام
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং নিকট আত্মীয়দের পরিত্যাগ করা।
আল্লাহ বলেন-
فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ
(محمد: ২২-২৩)
‘‘ক্ষমতা লাভের পর স্মভবত: তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিস্মপাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিহীন করেন।’’ (মুহাম্মদ:২২-২৩)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لايدخل الجنة قاطع رحم. . (رواه المسلم:৪৬৩৩)
‘‘আত্মীয়তার ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’’ ( মুসলিম:৪৬৩৩)
১০ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
الزنا
ব্যভিচার করা
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا (الإسراء: ৩২)
‘‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না । নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ওঅতি মন্দ পথ।’’ (ইসরা:৩২)
রাসূলেকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إذا زنى العبد خرج منه الإيمان فكان على رأسه كالظلة فإذا أقلع رجع إليه
(رواه الترمذى:২৫৪৯)
‘‘যখন কোন মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার থেকে ঈমান বের হয়ে যায়। ঈমান তার মাথার উপর ছায়ার মত অবস্থান করে যাখন সে বিরত থাকে ঈমান আবার ফিরে আসে।’’ (তিরমিযি:২৫৪৯)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
كتب على ابن آدم نصيبه من الزنا مدرك ذلك لا محالة فالعينان زناهما النظر والأذنان زناهما الاستماع واللسان زناهما الكلام واليد زناهما البطش والرجل زناهما الخطى والقلب يهوي ويتمنى ويصدق ذلك الفرج. (رواه مسلم:৪৮০২)
‘‘আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চক্ষুর ব্যভিচার হল দৃষ্টি এবং তার দুই কানের ব্যভিচার শ্রবণ, মুখের ব্যভিচার হল কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হল স্পর্শ করা ও পায়ের ব্যভিচার হল পদক্ষেপ আর অন্তরে ব্যভিচারের আশা ও ইচ্ছার সঞ্চার হয়, অবশেষে লজ্জাস্থান একে সত্যে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।’’ (মুসলিম:৪৮০২)
১১ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
اللواط وإتيان المرأة في الدبر
পুং মৈথূন এবং স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করা
আল্লাহ বলেন-
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِنَ الْعَالَمِينَ ﴿80﴾ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِنْ دُونِ النِّسَاءِ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ مُسْرِفُونَ ﴿81﴾ (الأعراف: ৮০-৮১)
‘‘এবং লুতকেও পাঠিয়েছিলাম, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘‘তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারী বাদদিয়ে পুরুষের নিকট গমন কর, তোমরা তো সীমালঙ্গনকারী সম্প্রদায়।’’ (আ‘রাফ; ৮০-৮১)
রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من وجدتموه يعمل عمل قوم لوط فاقتلوا الفاعل والمفعول. (رواه الترمذى:১২৭৬)
‘‘তোমরা কাউকে লূত সম্প্রদায়ের কাজ (সমকাম) করতে দেখলে যে করে এবং যার সাথে করা হয় উভয়কে হত্যা কর।’’ (তিরমিযি:১২৭৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন-
لا ينظر الله إلى رجل اتى رجلا او إمرآة في الدبر. (الترمذي:১০৮৬ صحيح الجامع)
‘‘আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, যে কোন পুরুষের সাথে সমাকামিতায় লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করে।’’ (তিরমিযী , সহীহ আল জামে)
১২ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
أكل الربا
সুদ খাওয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন-
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ. (البقرة: ২৭৫)
‘‘যারা সুদ খায় তারা দাড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়।’’ (বাকারা : ২৭৫)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
الربا ثلاثة وسبعون بابا أيسرها مثل أن ينكح الرجل أمه وإن أربى الربي عرض الرجل المسلم. (رواه الحاكم. صحيح الجامع)
‘‘সুদের গুনাহের ৭৩টি স্তর রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে হাল্কা হল নিজ মাতাকে বিবাহ করা। সর্বনিম্নস্তর হলো কোন মুসলমানের ইজ্জত সম্ভ্রম হরণ করা।’’ (হাকেম, সহীহ আল জামে)
১৩ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
أكل مال اليتيم
এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করা
আল্লাহ বলেন-
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا ﴿10﴾
. (النساء: ১০)
‘‘যারা এতিমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্তরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।’’ (নিসা: ১০)
১৪ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
الكذب على الله عز وجل وعلى رسوله
আল্লাহ এবং তার রাসূলৈর উপর মিথ্যা আরোপ করা
আল্লাহ বলেন-
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى اللَّهِ وُجُوهُهُمْ مُسْوَدَّةٌ . (الزمر: ৬০)
‘‘যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে কেয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কাল দেখবেন।’’ (যুমার: ৬০)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
من كذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.(البخاري:১০৭)
‘‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেন তার অবস্থান জাহান্নাম করে নেয়।’’ (বুখারী:১০৭)
হাসান রাহ. বলেন- স্মরণ রাখতে হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল যা হারাম করেননি তা হারাম করল, আর যা হালাল বলেননি তা হালাল বলল, সে আল্লাহ ও তার রাসূল এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করল এবং কুফরী করল।’’
১৫ নং কবীরা গুনাহ
▬▬▬▬▬▬
الفرار من الزحف
যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা
আল্লাহ বলেন-
وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَى فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
(الأنفال:16)
‘‘&আর যে ব্যক্তি লড়াইয়ের ময়দান হতে পিছু হটে যাবে সে আল্লাহর গযব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তন করতে কিংবা নিজ সৈন্যদের নিকট স্থান নিতে আসে সে ব্যতীত।’’ (আনফাল:১৬)
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্তমান যুগে মুসলমানরা শুধু যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে না বরং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে কোন ধরনের অংশই নিতেই চায় না। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
No comments