পিতা-মাতার সাথে ভাল ব্যাবহার করা

পিতা-মাতার সাথে সৎ-ব্যবহার করার নিদ্দেশঃ

1. আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে।
(৪ নিসাঃ ৩৬)

2. আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তাএই যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রে¸র কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ।
(৬ আন আমঃ ১৫১)

3. আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। (২৯ আনকাবুতঃ ৮)

4. আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। ( ৩১ লোকমানঃ ১৪)

5. আমি মানুষ এই মর্মে নির্দেশনা দিয়েছি যে, তারা যেন পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করে৷ তার মা কষ্ট করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছিলো এবং কষ্ট করেই তাকে প্রসব করেছিলো৷ তাকে গর্ভে ধারণ ও দুধপান করাতে ত্রিশ মাস লেগেছে৷ এমন কি যখন সে পূর্ণ যৌবনে পৌঁছেছে এবং তারপর চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয়েছে তখন বলেছে : “হে আমার রব, তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যেসব নিয়ামত দান করেছো আমাকে তার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও৷ আর এমন সৎ কাজ করার তাওফীক দাও যা তুমি পছন্দ করো৷ আমার সন্তানদেরকে সৎ বানিয়ে আমাকে সুখ দাও৷ আমি তোমার কাছে তাওবা করছি৷ আমি নির্দেশের অনুগত (মুসলিম) বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত৷” (৪৬ আহক্বাফঃ ১৫)
পিতা মাতা বৃদ্ধ হলে তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করাঃ

6. তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে উহ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। (১৭ বনী ইসরাঈলঃ ২৩)

7. তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (১৭ বনী ইসরাঈলঃ ২৪)
মা-বাবার সাথে ভাল ব্যাবহার করা আল্লাহ্‌র নিকট সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয়ঃ

8. আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (স) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহ্‌র নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয়? তিনি বললেনঃ সময় মত সালাত আদায় করা। আব্দুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেনঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ পিতা মাতার সাঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। আব্দুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেনঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করা। আবদুল্লাহ বললেনঃ নবী (স) এগুলো সম্পর্কে আমাকে বলেছেন। আমি যদি তাকে আরও বেশী প্রশ্ন করতাম, তিনি আমাকে অধিক জানাতেন। (বুখারি শরীফ/৯/আচার-ব্যবহার অধ্যায়/৫৫৪৫),(মুসলিম শরীফ/৮/ সৎ ব্যবহার, পারস্পরিক সম্পর্ক ও শিষ্টাচার/৬৩১৮)
মা’র আধিকার বাবার চেয়ে বেশিঃ

9. এক লোক রাসূলুল্লাহ (স) এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার? তিনি বললেনঃ তোমার মা। লোকটি বললঃ তারপর কে? নবী (স) তোমার মা। সে বললঃ তারপর কে? তিনি বললেন তোমার মা। সে বললঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তারপর তোমার বাপ। (বুখারি শরীফ/৯/আচার-ব্যবহার অধ্যায়/৫৫৪৬)
পিতা মাতাকে গালি দেয়া কবীরা গুনাহঃ

10. নবী (স) বলেছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের মধ্য সবচেয়ে বড় হলো নিজের পিতা-মাতাকে লা’নত করা। জিজ্ঞাসা করা হলোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপন পিতা-মাতাকে কোন লোক কিভাবে লা’নত করতে পারে? তিনি বললেনঃ সে অন্য কোন লোকের পিতাকে গালি দেয়, তখন সে তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্যে মাকে গালি দেয়, তারপর সে তার মাকে গালি দেয়। (বুখারি শরীফ/৯/আচার-ব্যবহার অধ্যায়/৫৫৪৮)
মা-বাপের নাফরমানী না করাঃ

11. নবী (স) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মা-বাপের নাফরমানী করা, প্রাপকের প্রাপ্য আটক রাখা, যে জিনিস গ্রহণ করা তোমাদের জন্য ঠিক নয়, তা তলব করা এবং কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন গল্প-গুজব, অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা ও সম্পদ নষ্ট করা। (বুখারি শরীফ/৯/আচার-ব্যবহার অধ্যায়/৫৫৫০)
মাতা-পিতা অমুসলিম হলেও তাদের সাথে ভাল ব্যাবহার করাঃ

12. পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। ( ৩১ লোকমানঃ ১৫)

13. আসমা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী (স) এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি নবী (স) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলামঃ তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবো কি না? তিনি বললেন হ্যাঁ। ইবন উয়ায়না (র) বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেনঃ যারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে না তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে নিষেধ করছেন না। (বুখারি শরীফ/৯/আচার-ব্যবহার অধ্যায়/৫৫৫৩)

14. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ তার নাক ধুলায় মলিন হোক, তার নাক ধুলায় মলিন হোক, তার নাক ধুলায় মলিন হোক, যে তার পিতামাতা উভয়কে বা একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও বেহেশতে যেতে পারলো না। (মুসলিম/৮/সৎ ব্যবহার, পারস্পরিক সম্পর্ক ও শিষ্টাচার /৬৩২৮)
পিতামাতার বন্ধু-বান্ধবের সাথে সদ্ব্যবহার করাঃ

15. রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ পিতার বন্ধুদের সাথে সদ্ব্যবহার করা পুত্রের জন্য সবচেয়ে বড় নেকের কাজ। (মুসলিম/৮/সৎ ব্যবহার, পারস্পরিক সম্পর্ক ও শিষ্টাচার /৬৩৩০)

No comments

Powered by Blogger.