পড়াশুনায় ক্ষতির কারণ ১০ টি প্রযুক্তি পণ্য

পড়াশুনায় ক্ষতির কারণ  ১০ টি প্রযুক্তি পণ্য

জানেন কি, মাল্টিটাস্কিংয়ের নামে হাইটেক গ্যাজেট এবং টেকনোলজির ব্যবহার কাজে অন্যতম বাধার কারণ হতে পারে! রিসার্চে দেখা গেছে, যারা নিজেদেরকে মাল্টিটাস্কিংয়ে পারদর্শী দাবী করে কর্মক্ষেত্রে তারা অন্যদের তুলনায় আরো বাজে ফলাফল দেখিয়েছেন। তাছাড়া অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, সচরাচর মানুষের কোন কাজের মাঝে ব্যাঘাত ঘটলে আগের মত পূর্ণ মনযোগ ফিরিয়ে আনতে ৮-৯ মিনিট পর্যন্ত সময় নিতে পারে। তাই পূর্ণ মনযোগ প্রয়োজন হতে পারে এমন কাজের মাঝে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার কাজের প্রোডাক্টিভিটি অনেকখানি কমিয়ে দেয়। তেমন দশটি হাইটেক গ্যাজেট এবং টেকনোলজি নিয়েই আজ আলোচনা করবো যার ব্যবহার পড়াশোনা কিংবা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাভের চেয়ে ক্ষতিই করে বেশি।

১০. আইপড এবং এমপিথ্রি
পড়ালেখার সময় আইপড কিংবা এমপিথ্রির মাধ্যমে গান শোনা মনযোগ বিক্ষেপের অন্যতম কারণ হতে পারে। কারণ বেশিরভাগ মানুষ একই সাথে দুটো ভিন্ন শব্দ শুনলেও সেটার একটিতে মনোযোগ দিতে পারে এবং বুঝতে পারে। তাছাড়া অমনযোগী হয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হল মিউজিকের নয়েজ, সেজন্য শ্রোতা গান শোনার পাশাপাশি অন্যকিছু শুনতে পায়না। কথা হল,কেন শুনতে পায়না?

প্রতিটি মানুষের অবচেতন মন কোনকিছু শোনার পর সেটার অর্থ খুজে বের করে এবং সেটার মানে বুঝতে চায়। ব্যাপারটা অনেকটা ডিকোডিং এর মত, যাকে মনের সহজাত প্রবণতাও বলা যায়। আর এজন্যেই কাজ করার সময় গান শুনলে গানের দিকে মনযোগ চলে আসে এবং অন্য কাজটিতে মনযোগের বিঘ্ন ঘটে সহজেই।
ঠিক এই কারণেই ড্রাইভিং এর সময় হেডফোনে গান শোনা কিংবা ফোনে কথা বলার জন্যে নিষেধ করা হয়ে থাকে।

৯. গাড়ি এবং মেশিনের শব্দ
শব্দ কিভাবে মনযোগের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে সেটি আগেই আলোচনা করেছি। গাড়ি এবং মেশিনের শব্দও একই প্রক্রিয়ায় মনযোগের ব্যাঘাত ঘটানোর অন্যতম কারণ হতে পারে। আর এই কারণেই বাইরের দেশগুলোতে ইয়ারপ্লাগ এত বেশি জনপ্রিয়।

৮. ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এবং ব্ল্যান্ডার
পরীক্ষায় দেখা গেছে বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত সচরাচর ভ্যাকুয়াম ক্লিনার থেকে ৭০ ডেসিবেল এবং ব্ল্যান্ডার মেশিন থেকে ৮৮ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ নির্গত হয় যা কিনা হিয়ারিং ড্যামেজ করার জন্যে যথেষ্ট (সূত্র: এয়ারপোর্ট নয়েজ ল)।

পড়ার সময় এইরকম শব্দ আপনার পড়ালেখার বিঘ্ন ঘঠানোর জন্যে যথেষ্ট নয় কি?

৭. গেম কনসোল:
কনসোলে গেম খেলা অবশ্যই মজার। তাছাড়া অনেক ব্রেন গেম টাইপের গেমগুলো ব্রেনকে ট্রেইন্ড আপ করতে বেশ ভাল ভূমিকাও রাখে। কিন্তু এটি মনযোগের বিঘ্ন ঘটানোর অন্যতম কারণ হতে পারে যদি সারাদিন এটি নিয়েই পড়ে থাকেন।

বিশেষত অনলাইনে আমরা যেসব গেম খেলে থাকি তার বেশীরভাগেরই কোন শেষ নেই। তাই পরের স্টেজে কি হবে সেই আসক্তিতে সারাদিন পড়ে থাকতেও খারাপ লাগেনা। সবচেয়ে ক্ষতিকর ব্যাপার হল, গেম রেখে অন্য কাজ করতে গেলেই মনে হবে কখন আবার খেলবেন। আর এই দুষ্ট চক্রে একবার পড়ে গেলেই হল, অন্য কোন কাজেই মন বসানো কঠিন হয়ে যাবে।

৬. টেলিভিশন:
একটা ব্যাপার হয়তো অবশ্যই খেয়াল করেছেন, সময় অপচয়ের জন্যে টেলিভিশনের তুলনা হয়না। আর পড়াশুনার সময় হলেতো কথাই নেই, টিভি দেখতে দেখতে কখন যে দীর্ঘসূত্রীতার দুষ্টচক্রের কবলে পড়ে যাবেন নিজেও বুঝতে পারবেন না। কারণ টিভি দেখতে বসার সময় আমরা সিদ্ধান্ত নেই টিভি শো টা শেষ করেই পড়ায় বসে যাব কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় ঘুম না আসা পর্যন্ত একটার পর একটা অনুষ্ঠান দেখা হতেই থাকে। আর সকাল বেলার নিউজ দেখতে গিয়ে অফিসে যেতে দেরী করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কিন্তু নিতান্ত কম নয়।।

৪. টেক্সট মেসেজ:
জরুরী একটা কাজে বসেছেন এমন সময় মোবাইলে একটা টেক্সট মেসেজ আসলো, মেসেজটি না দেখা পর্যন্ত কি শান্তি পাওয়া যায়?
পরীক্ষায় দেখা গেছে যেসব কাজে মানুষ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে অভ্যস্ত সেগুলো পড়াশোনা কিংবা অন্যান্য কাজে মনযোগের ব্যাঘাত ঘটাতেও বড় ভূমিকা পালন করে। কারণ যতবারই ফোনের দিকে নজর দিচ্ছেন, মনযোগ ততবারই বিক্ষিপ্ত হচ্ছে।

৩. স্মার্টফোন
বলা হয়, স্মার্টফোন হল সকল সমস্যার মূল। বর্তমান সময়ে আমরা এমন এক যুগে বসবাস করছি যেখানে ফোন কল, টেক্সট মেসেজ, স্মার্ট ফোন নোটিফিকেশন, ইমেইল নোটিফিকেশন দ্বারা বিক্ষিপ্ত হচ্ছি প্রতিনিয়ত।হয়তো কখনো কখনো বুঝতে পারছি আর কখনোবা না বুঝেই।
পিসি, ল্যাপটপ, ব্ল্যাকবেরী বা আইফোন যাই বলুন না কেন, কাজের ব্যাঘাত ঘটাতে এরা সকলেই সমান পারদর্শী।

২. রিমোট কনট্রোল
টেলিভিশন নিয়ে আলোচনার সময়েই বলেছিলাম, অমনযোগীতার শুরুই হয় “আরেকটি এপিসোড দেখবো” এই একটি কথা দিয়ে। আর রিমোট কনট্রোল চোখের সামনে পড়লে এই কথাটি মনে পড়ে যায় সবার আগে। একটি রিসার্চে দেখা গেছে রিমোটের ব্যাটারী খুলে অচল করে রাখলে এবং রিমোট কনট্রোল ছাড়া টিভি দেখলে এর প্রতি আগ্রহ কমে যায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। কথাটি বিশ্বাস হয়না! চেষ্টা করেই দেখুন না কেমন লাগে… :)

১. সোশ্যাল মিডিয়া
দূরের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা অবশ্যই ভাল, তার পাশাপাশি নিজেকে অন্যের কাছে তুলে ধরার ভাল একটি মধ্যমও এটি। তবে অতিমাত্রায় এর ব্যবহার পড়ালেখার অভ্যাসকেও বদলে দিতে পারে অনায়াসে।

ফেসবুক, টুইটার এর নিয়মিত আপডেটে মস্তিষ্ক এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যায় যে একটা সময়ে সে ক্লান্ত হতে থাকে। তখন বুঝতে পারবেন বসে থাকার কোন প্রয়োজন নেই কিন্তু উঠে যাওয়াটা হয়ে যায় কষ্টকর। পাশাপাশি ক্লান্ত মস্তিষ্কের জন্যে নতুন কোন কাজে মনযোগ দেয়াটাও হয়ে যায় খুব কষ্টকর। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে? এতক্ষণ তো অনেক গবেষণার কথাই বললাম, এখন নিজেকে দিয়েই একটু পরীক্ষা করে নিন।

বলেছিলাম পড়াশুনায় ক্ষতির কারণ হতে পারে যে ১০ টি প্রযুক্তি পণ্য সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। আলোচনা করা হয়েছে ৯ টি নিয়ে আর মাঝে বাদ গিয়েছে একটি, খেয়াল করেছেন কি?

No comments

Powered by Blogger.