ক্যারিয়ারের জন্য আচরণবিধি


ক্যারিয়ারের জন্য আচরণবিধি

শিক্ষাজীবন এবং কর্মজীবনের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। শিক্ষাজীবনে নেই কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম। বিশেষ করে স্কুল-কলেজে কিছুটা নিয়মের অধীনে চলতে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গেলে নিজের খেয়াল-খুশি মতো চলাই হয়ে পড়ে রীতি। সে ক্ষেত্রে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করতে করতে দীর্ঘ ছয়-সাত বছর ধরে নিজের ইচ্ছেমতো চলার একটি অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। চাকরিতে ঢুকলেই তাই কিছুটা বেকায়দায় পড়তে হয়। কেননা এখানে আর নিজের খেয়াল-খুশি মতো চলার সুযোগ নেই। অফিসের রীতি-নীতি, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশ সবকিছু মিলিয়েই চলতে হয় চাকরির জীবনে। কেবল চাকরির জন্যই নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজন সঠিকভাবে আচরণ করতে শেখা। এমনকি শিক্ষাজীবনে যে নিজের ইচ্ছেমতো চলার স্বাধীনতা থাকে, সেখানেও অন্যদের সাথে কথা বলতে বা পথ চলতে প্রয়োজন সঠিক আচরণ করা। লিখেছেন আফরিন জাহান

আচররণবিধি কেমন হবে

'হাউ ডু ইউ ডু'র উত্তরে 'আই অ্যাম ফাইন, থাঙ্ক ইউ' বা 'ভেরি ওয়েল' বলা, হেসে মাথা নাড়া কিংবা 'হাউ ডু ইউ ডু' বলা—এগুলো খুব প্রাথমিক আচরণবিধির মধ্যে পড়ে। প্রথম পরিচয়ে 'গ্ল্যাড টু মিট ইউ' বা 'প্লিজড টু মিট ইউ' বলাটাও সাধারণ ভদ্রতা। দেখা হলেই করমর্দন করা, 'হ্যালো' বলা, 'থ্যাঙ্ক ইউ'-এর উত্তরে 'থ্যাঙ্ক ইউ টু' বা 'ওয়েলকাম', 'মাই প্লেজার' ইত্যাদি বলাটাও চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণ আচরণ হিসেবেই স্বীকৃত। কাজেই এই বিষয়গুলো শুরুতেই মাথায় রাখতে হবে। এসব আচরণ বা শব্দাবলীকে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে।

কথা বলা

কথা বলার সময় গলার স্বর ও বাচনভঙ্গির দিকে খেয়াল রাখুন। কথা বলুন ধীরে, স্পষ্ট ভাষায়, নির্দিষ্ট শব্দ চয়নে, যাতে করে সকলে আপনার কথাটি একবার শুনেই স্পষ্ট করে বুঝতে পারে। একই কথা একাধিকবার যাতে বলতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে প্রাণখোলা আড্ডা বা ইনফর্মাল জমায়েত ছাড়া খুব জোরে কথা বলা অনুচিত। অফিসের মধ্যে এমনভাবে কথা বলুন, যাতে আপনার কথায় অন্যের কোনো সমস্যা না হয়। অন্যের কথার মাঝে কথা বলবেন না। কোনও কারণে বলে ফেললে 'সরি' বলুন। নিজের কথা বেশি বলবেন না। চেষ্টা করুন অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে। অন্যের কথাতেই বেশি গুরুত্ব দিন। অনেকে কথা শুরু করার আগে 'উ' করে শব্দ করেন, সর্বনাম দিয়ে শুরু করেন। এগুলো আপনার শ্রোতাদের বিরক্ত করে। কাজেই এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করা প্রয়োজন। কথা বলতে বলতে হাঁচি বা কাশি এলে 'এক্সকিউজ মি' বলুন।

রীতি

জন্মদিন, নববর্ষ, পরীক্ষায় সাফল্য ইত্যাদি বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়াও অনেকদিন পর দেখা হলে গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করাটা আমাদের সমাজে ভদ্রতা বলেই পরিচিত। জুতো খুলে ঘরে ঢোকা, বয়স্ক মানুষকে সময় দেওয়া, তাদের কাজে সাহায্য করা, অভিভাবকের সঙ্গে তর্ক না করা, মতের অমিল হলে যুক্তি দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করা প্রভৃতির দিকে নজর দিন। নিজের মতামত অন্যদের উপর চাপিয়ে দিবেন না। অন্যের অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আর ভুল হলে দুঃখ প্রকাশ করতে ভুলবেন না। জীবনের যেকোনো পর্যায়েরই এই অভ্যাসগুলো আপনাকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিতে সহায়তা করবে।

পরিচয় করানোর সময়

বড় সমাবেশে অনেক সময় প্রয়োজনে নিজেই নিজের পরিচয় দিয়ে কথা শুরু করতে পারেন। কোনো মহিলা কথা বলতে এলে পুরুষের উঠে দাঁড়ানো রীতি। কিন্তু মহিলার ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয়। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বিদায় আলাপকে দীর্ঘ করবেন না। হোস্টেসকে আটকে রাখলে তিনি অন্যান্য অতিথির দিকে নজর দিতে পারবেন না। কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিলে পরের দিন ফোনে ধন্যবাদ জানান, রান্নার প্রশংসা করুন।

দেহের ভাষা

দেহের ভাষা বা বডি ল্যাংগুয়েজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার দেহের ভাষা দেখে একজন শুরুতেই আপনার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পোষণ করে ফেলেন। কাজেই দেহের ভাষাকেও মুখের ভাষার মতোই পরিশীলিত করে তুলতে হবে।

হাঁটার সময় শিরদাঁড়া সোজাা রেখে, পিঠ টানটান করে, পেট টেনে ভিতরে ঢুকিয়ে রাখুন। থুতনি সোজা রাখবেন। গোড়ালি আগে ফেলবেন, মাটিতে পা ঘষবেন না। কোমর দোলাবেন না। লঘু পায়ে হাঁটার অভ্যাস করুন। সঙ্গী পাশে থাকলে সঙ্গেই চলুন, এগিয়ে বা পিছিয়ে পড়বেন না। কথা বলতে বলতে অন্যের মুখের সামনে চুইংগাম ফোলাবেন না। কোনো সমাবেশে দূরে পরিচিতজনকে দেখে ব্যাকুল হয়ে হাত উঁচু করে ঘনঘন ডাকবেন না। অপেক্ষা করুন। আপনার দিকে তাকালে তবেই পরিস্থিতি বুঝে অল্প হাত নাড়ুন। হ্যান্ডশেকের জন্য বাড়ানো হাত ধরুন দৃঢ়ভাবে। দাঁড়ানো বা বসার সময় কোলকুঁজো হবেন না। চেয়ারে বসার সময় মাঝামাঝি জায়গায় বসবেন। এগিয়ে চেয়ারের ধারে অথবা হেলান দিয়ে গা এলিয়ে বসবেন না। হাত দুটো কোলের ওপর রাখবেন। ভালো হয় বাঁ হাতের পাতা ডান হাতের কবজির ওপর রাখলে। খাওয়ার টেবিলে কনুই রাখবেন না। বসে পা নাচাবেন না। হাই ওঠার উপক্রম হলে মুখে রুমাল চাপা দিন অথবা হাত দিয়ে আড়াল করুন। 'খুব ভালো লেগেছে' বা 'যাচ্ছেতাই' ভাব প্রকাশে মুখভঙ্গি সংযত রাখুন। পা জোড়া করে বসাই ভাল। হাঁটুর ওপর হাঁটু তুলে বসতে পারেন, নির্ভর করবে আপনার পোশাকের ওপর। স্কার্ট পর থাকলে গোড়ালি দুটি ক্রস করে রাখা শোভন। বাস বা ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করার সময় কোমর ভেঙে দাঁড়াবেন না। ঘাড়-মাথা চুলকাবেন না। অপরিচিত ব্যক্তির দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকবেন না। স্টেয়ার করা অনুচিত। ঘনঘন শাড়ির আঁঁচল, ওড়না বা চুল গোছাবেন না। সবার মাঝে চুল আঁঁচড়াবেন না, লিপস্টিক লাগাবেন না।

পোশাক আশাক

পোশাকের প্রথম কথাই হল কাট। ভালো কাটের পোশাক পড়ার অভ্যাস করা জরুরি। সঠিক মাপের পোশাক পড়ুন। বয়স, চেহারার গঠন, সময় এবং অনুষ্ঠান বুঝে পোশাক বাছাই করুন। পোশাক পড়ার ক্ষেত্রে অন্যকে অন্ধের মতো অনুরকরণ করবেন না। এমন পোশাক পড়ুন, যাতে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন। স্বস্তিবোধ না করলে সেই পোশাক না পড়াই ভালো। অফিস যারা করেন, তাদের অফিস ডেকোরামের সাথে মিলিয়ে পোশাক পড়া বাঞ্ছনীয়। অফিসে সবাই ফর্মাল ড্রেস পড়লে আপনিও তাই পড়ুন।


No comments

Powered by Blogger.