এই গ্রান্ডমা একজন হিরো




**এই গ্রান্ডমা একজন হিরো**

শিলা ঘোষ।৮৩ বছর বয়স্ক এই বৃদ্ধা থাকেন পশ্চিমবঙ্গের পালি জেলায়। প্রতিদিন তিনি পালি থেকে কোলকাতায় আসেন পাপড় আর চিপস বিক্রি করতে।রাশ বিহারী দাশ ক্রসিং এর সামনের ফুটপাতে গেলে এখনো যে কেউ তার দেখা পাবেন।তার একমাত্র সন্তান ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ছয় মাস আগে মারা গেছেন। নাতি নাতনিদের নিয়ে বেঁচে থাকতে তাই প্রতিদিন তার গড়ে ১৫০ টাকার মত লাগে। তাই তিনি সুদূর পালি থেকে দুই দুইটি বাস পরিবর্তন করে কোলকাতার রাশ বিহারী দাশ লেনে আসেন।এই বয়সে কিভাবে এতটা পথ প্রতিদিন পারি দেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,

''আমি পারি....বাস ধরে চলে আসি এখানে....বাসটা বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়....বিক্রি করে চলে যাই।''

বিহারী দাশ ক্রসিং দিয়ে কলেজে যাওয়ার সময় কলেজ পড়ুয়া সুফিয়া খাতুন প্রতিদিন দূর থেকে সে শীলা ঘোষকে পাপড় বিক্রি করতে দেখতো।তার দাদীর চেয়েও বৃদ্ধ একজন মহিলার বেঁচে থাকার এই সংগ্রাম তাকে ব্যথিত করে।সুফিয়া এই বৃদ্ধার জন্য কিছু করতে চাইলো।এরপর তার ফেসবুকের একটি পোষ্ট পড়ে শুক্রবার বিকেলে তার মত ২২ জন সেই ফুটপাতে আসেন শীলাকে দেখতে।তারা ১৬০০ টাকার একটা ছোট সংগ্রহ বৃদ্ধার হাতে তুলে দিতে চায়।

সুফিয়া্র ভাষায়,' তিনি আমাদের এই সাহায্য গ্রহন করলেও পরবর্তীতে কোন আর্থিক সাহায্য গ্রহন করতে অস্বীকার করেন।আমাদের বলেছেন যে তিনি নিজে কাজ তার জীবিকা নির্বাহ করতে চান,কারো সাহায্য নিয়ে বাঁচতে চান না।'

পরে আরো অনেকে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করলেও তিনি তাদের কাছ থেকে কোন টাকা গ্রহন করেননি।লোকেরা বুঝতে পারে যে তারা যার সাহায্য করার চেষ্টা করছে মানসিকভাবে তার শক্তিমত্তা কেমন। পরে তারা বুদ্ধি করে একে একে তার কাছ থেকে পাপড় গুলো কিনে নেন, এমনভাবে যেন তিনি বুঝতে না পারেন যে তাকে সাহায্য করা হচ্ছে।

শীলা ঘোষের এই অবস্থায় এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হত যদি তিনি ভিক্ষা করা শুরু করে দিতেন।কিন্তু তার আত্বমর্যাদা ও আত্বসম্মান বোধই ছিল তার কাছে সবকিছু।তিনি তার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত বেঁচে থাকার জন্য কাজ করে যাবেন তবু ভিক্ষা করবেন না।যে সকল মানুষেরা নিজেদের জীবন নিয়ে সবসময় অভিযোগ করেন শীলা ঘোষের কাছে অনেক কিছুই শেখার আছে তাদের।স্যালুট এই গ্রান্ডমাকে।তিনি প্রমান করে চলেছেন,'আল্লাহ তাকেই সাহায্য করেন,যে নিজেকে সাহায্য করে।'

No comments

Powered by Blogger.