দাদা আর নাতিনের গল্প
দাদা আর নাতিনের গল্পঃ
দাদী মারা যাওয়ার পর গ্রামের বাড়ি থেকে দাদা শহরে ছেলের বাড়িতে একেবারে চলে এসেছেন। গ্রামে কেউ না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে চলে আসতে হয়েছে। শহরের বাসায় তার ছেলে, ছেলের বউ আর পাঁচ বছরের নাতনী থাকে। সুখী পরিবার।
দাদার
অনেক বয়স হয়েছে। হাতে তেমন শক্তি পাননা ফলে হাত সবসময় কাপতে থাকে। চোখেও ঠিক মত দেখতে পাননা। কিন্তু দাদার কাছে গল্প শুনতে নাতিনের খুব ভালো লাগে। প্রতিদিন রাতে দাদার গল্প না শুনে নাতিন ঘুমাতে যেতে চায় না।
রাতে যখন তারা একসাথে খাবার খায় তখন কিছু সমস্যা হতে থাকে। দাদার হাত থেকে প্রায়ই খাবার পড়ে যেতে থাকে, গ্লাস পড়ে গিয়ে পুরো ডাইনিং টাই হয়ত ভিজে যায় কিংবা চোখে কম দেখে বলে হয়ত প্রায়ই এক খাবারের সাথে অন্য খাবার মিশিয়ে ফেলেন। দিনের পর দিন এমন সমস্যা বাড়তে থাকে আর পুরো ডাইনিং নোংরা হচ্ছে বিধায় দাদাকে এখন আলাদা টেবিলে খাবার দেয়া হয়।
এখানেই সমস্যার শেষ নয়। প্রায়ই দাদার হাত থেকে কাঁচের জিনিস পড়ে ভাঙতে থাকে। তাই অবশেষে সিন্ধান্ত হল দাদাকে এখন থেকে ঘরে রাখা পুরোন একটা থেতলা স্টিলের প্লেটে আর গ্লাসে খাবার দেয়া হবে।
...
পরিবারের সকলের সাথে খাবার টেবিলে আনন্দের সাথে খেতে না পারার কারনে দাদা প্রায়ই নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলেন। নিজের অক্ষমতা আস্তে আস্তে তার বয়সকে যেন আরও দিগুন করে ফেলল- শরীর আরও দুর্বল হতে লাগলো।
এভাবে বেশ কিছুদিন চলে যাওয়ার পর একদিন উপর থেকে ভারী বাক্স পড়ে গিয়ে দাদার জন্য নির্ধারিত থেতলে যাওয়া প্লেটটা আরও থেতলে যায় এবং একদিক দিয়ে ফেটে যায়।
নাতিন দ্রুত দাদার কাছে থেকে প্লেটটা নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে প্লেটটা ঠিক করতে লাগলো। আর ফেটে যাওয়া জায়গার পেছনে টেপ লাগাতে লাগলো।
ছেলের এই কাণ্ড দেখে বাবা নরম স্বরে জানতে চায়-
“আমার ছোট্ট জাদু মণি, তুমি কি করছ?”
ছেলে বাবার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে-
“ বাবা, আমি প্লেটটা ঠিক করার চেষ্টা করছি”।
বাবা ছেলের হাত থেকে হাতুড়ি নিয়ে, হেসে দিয়ে বলে-
“ তোমার হাত কেটে যেতে পারে, আমি কাল আরেকটা কিনে নিয়ে আসব”।
ছেলে উত্তর দেয়-
“ বাবা, শক্ত দেখে কিনে নিয়ে আসবে”।
বাবা জানতে চায়-
“ এত শক্ত দিয়ে কি হবে?”
ছেলে বলে-
“আমি বড় হলে তোমাকেত এই ধরনের প্লেটেই খেতে দিব, কারন তখন তুমিও বুড়ো হয়ে যাবে”।
বাবার মনে এই কথাটা একটা প্রচণ্ড ধাক্কা দিল। মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করল তার বাবা খুব ছোটবেলা যেমন তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিত প্রয়োজন হলে সে তাই করবে।
No comments