কেন পারবেন না?

কেন পারবেন না? আসলে আমাদের একটা ভুল ধারণা হলো, প্রতিভা গড-গিফটেড একটা ব্যাপার। সামর্থ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা না করেই নিজেদের ক্ষমতা-দক্ষতা-প্রতিভার একটা সীমারেখা টেনে দিই আমরা। বলি, আইনস্টাইন একজনই হয়েছেন। বেটোভেনের মতো সুরস্রষ্টাও আর কেউ হতে পারবে না।

অথচ এটা যে কত ভুল একটি ধারণা, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণাভিত্তিক একটি বই ‘দ্যা জিনিয়াস ইন অল অফ আস’-এ লেখক ডেভিড শ্যাংক দেখিয়েছেন, আসলে ঈশ্বর প্রদত্ত নয়, বরং অদম্য ইচ্ছা আর প্রচেষ্টার ফসলই হলো প্রতিভা। তিনি বলেন, জিনিয়াস হওয়ার জিন সবার মধ্যেই আছে। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে আমরা ভেতরের আলোটা বের করে আনতে পারি না। বিনয় স্বপ্ন ইচ্ছাশক্তি আর লক্ষ্য ছোঁয়ার অটুট সংকল্প থাকলে যেকোনো বয়সে আপনিও হতে পারেন বিশ্বখ্যাত প্রতিভার অধিকারী।

ছোটবেলা থেকে আপনি কখনো ভালো রেজাল্ট করতে পারেন নি। তার মানে এই নয় যে, আপনি আগামীতে ভালো করতে পারবেন না। আসলে ভালো রেজাল্ট করাটা খুবই সহজ, করতে চাইলেই করা যায়। এজন্যে জিনিয়াস বা অসাধারণ মেধাবী বা শ্রুতিধর হওয়ার দরকার নেই। গন্ডায় গন্ডায় প্রাইভেট টিচার বা ভালো স্কুল কিংবা ধনী মা-বাবার সন্তান হওয়াও ভালো রেজাল্টের শর্ত নয়। ভালো রেজাল্টের জন্যে প্রয়োজন মাত্র দুটি জিনিস। এক-আত্মবিশ্বাস, দুই-অদম্য ইচ্ছা।
ড. বি আর আম্বেদকরের কথাই ধরুন। তার জন্ম ১৯ শতকের শেষভাগে, ব্রিটিশ ভারতের মধ্য প্রদেশে এক দরিদ্র পরিবারে। ছিলেন মা-বাবার চতুর্দশ সন্তান। অস্পৃশ্য হরিজন হওয়ায় স্কুলে তাকে বসতে হতো ক্লাসের বাইরে বারান্দায়। এমনকি তেষ্টা পেলে স্কুলের উচ্চবর্ণের দপ্তরী ছোঁয়া বাঁচিয়ে ওপর থেকে পানি ঢেলে না দেয়া পর্যন্ত পানি পানের অনুমতিটুকুও ছিলো না তার।
এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে ১৯ মাইল দূরের পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মাঝপথে গাড়োয়ান তাকে গরুর গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিলো অস্পৃশ্য হওয়ার অপরাধে। এতকিছুর পরও হার মানেন নি। দারিদ্র আর রোগ-শোকের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে যাওয়া মাত্র পাঁচ ভাই-বোনের এক জন ছিলেন আম্বেদকর এবং একমাত্র তিনিই পেরোন হাইস্কুলের গন্ডি।

ভারতের ইতিহাসে তিনিই প্রথম দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য যিনি কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে আইন ও অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রিসহ অর্জন করেন কয়েকটি ডক্টরেট। দেশে ফিরে একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীর পাশাপাশি তিনি হয়ে ওঠেন সমকালীন রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জীবনকে উৎসর্গ করেন।
স্বাধীন ভারতের সংবিধান প্রণয়নের গুরুদায়িত্ব পালন করে ‘বাবা আম্বেদকর’ নামে ভারতবর্ষে তিনি হয়ে ওঠেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়। প্রতিবছর তার জন্ম ও মৃত্যুদিবসে হাজারো মানুষ সমবেত হয় তার স্মৃতিসৌধে। আপনার অবস্থা নিশ্চয়ই বাবা আম্বেদকরের চেয়ে খারাপ নয়। তাহলে আপনি কেন পারবেন না?

আসলে আপনি যে পারবেন-সে প্রমাণ দিয়েই আপনি পৃথিবীতে এসেছেন। মাতৃগর্ভে একটি ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার জন্যে পিতার দেহ থেকে যে ৩০ থেকে ৫০ কোটি শুক্রাণু যাত্রা শুরু করেছিলো, আপনি হচ্ছেন সেই একটিমাত্র শুক্রাণুর বিকশিত রূপ, যে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হতে পেরেছিলো। ৩০/ ৫০ কোটির সাথে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন বলেই আপনি পৃথিবীতে আসতে পেরেছিলেন।
নিজের মনোদৈহিক প্রক্রিয়াকে একটু বুঝতে চেষ্টা করলেই এই আস্থা ও আত্মবিশ্বাস অনেকগুণ বেড়ে যাবে। বিশ্বের সাতশ কোটি মানুষের মধ্যে আপনি অনন্য। তাই ক্লাসে প্রথম হওয়া থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি যুক্তিসঙ্গত চাওয়াকে আপনি পাওয়ায় রূপান্তরিত করতে পারবেন কেবল যদি বিশ্বাস করতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.